গণহত্যা: ২০ এপ্রিলের মধ্যে হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনা ও আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আসামিদের মধ্যে ১৬ জনকে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় হাজির করা হয় ট্রাইব্যুনালে। এরা হলেন— সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
অন্য যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি করা হয় তারা হলেন— শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ সেলিম, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ মামুন, ডিবি হারুন, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, সাবেক ডিএমপি হাবিবুর রহমান, সাবেক র্যাব ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আনাম সিদ্দিকী, সাবেক বিচারপতি মানিক, ড. জাফর ইকবাল, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামসহ ৪৬ জন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুর রহমান। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও গাজী এমএইচ তামিমসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর। আদালতে আসামির পক্ষে ওকালতনামা জমা দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২০ এপ্রিল নির্ধারণ করেছেন অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার আরও ১৬ জনের বিষয়েও তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।’
শেখ হাসিনার তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান স্ট্যাটাস যে কোনো পর্যায়ে তদন্তটা আছে, সেটা আদালতে বলেছি। আমরা আশা করি আগামী মাসের মধ্যে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেটা, সেটার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হতে পারে। এটা কোনো ফাইনাল টাইমলাইন নয় বলেও জানান তিনি।
‘আমাদের তদন্ত রিপোর্টের মধ্যে জাতিসংঘের রিপোর্ট ন্যাচারালি অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করছি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের উপাদানগুলো চেয়েছি। সেগুলো সংগ্রহের একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। যতটুকু পাওয়া যাবে, সেটাকে তদন্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত করব। এটা মামলা প্রমাণের জন্য বড় এভিডেন্স (প্রমাণ) হিসেবে কাজ করবে। এ জন্য দুই মাসের সময় চেয়েছিলাম। আদালত ২০ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ রেখেছেন। আমরা আশা করছি এর আগে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে পারব। আমরা তদন্তের একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি।’
স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচারে করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩। সে আইনে অপরাধীদের বিচারও চলে আসছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর সে আইন নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্টে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে।
বিচারের জন্য উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হয়েছে আইনে। শুধু আইনেই নয়, মেরামত করে দৃষ্টিনন্দন তথা ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন। সংশোধিত আইনে বিচার হবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অপরাধে অভিযুক্তদের।
গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ একশর বেশি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে। এসব মামলার মধ্যে গত ১৭ অক্টোবরে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। মামলায় আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।