কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ না হলে স্বাধীনতা বিপন্ন হবে: সেনাপ্রধান

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি না করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। যদি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ করা না হয়; তাহলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে বলেও হুঁশিয়ারি করে দেন তিনি।

২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এ আহ্বান জানান। রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের হেলমেট হলে এ অনুষ্ঠান হয়।

তিনি বলেন, ‘দেশ-জাতি যাতে একসাথে থাকতে পারি, সেদিকে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের মতের বিরোধ থাকতে পারে, চিন্তা-চেতনার বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু দিনশেষে যাতে আমরা সবাই দেশ-জাতির দিকে খেয়াল করে এক থাকতে পারি; তাহলে এ দেশ উন্নত হবে—সঠিক পথে পরিচালিত হবে। না-হলে আমরা আরও সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে। আমরা সেদিকে যেতে চাই না।’

‘আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, বলবেন যে আমি সতর্ক করিনি—আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ করতে না পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন; এ দেশ ও জাতির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে,’ বলেন সেনাপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই, একটিই আকাঙ্ক্ষা দেশ ও জাতিকে একটি সুন্দর জায়গায় রাখা। আই হ্যাড ইনাফ। লাস্ট সেভেন-এইট মান্থ, আই হ্যাড এনাফ। আমি চাই, দেশ ও জাতিকে একটি সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসবো।’

‘আরেকটি জরুরি বিষয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার নেপথ্যে কিছু কারণ আছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে—আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত। একজন-আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য। যেহেতু আমরা একটি অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করছি, সেহেতু তারা ভালোভাবেই জানেন যে এই সময় এসব অপরাধ করা গেলে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সে কারণে এই অপরাধগুলো হচ্ছে।’

ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, ‘আমরা যদি সংগঠিত থাকি, একত্রিত থাকি, তাহলে অবশ্যই এটা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই—এগুলো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ অতীতে করেছে। খারাপ কাজের সঙ্গে অসংখ্য ভালো কাজ করেছে। আজ দেশের যে স্থিতিশীলতা, দেশকে যে এতগুলো বছর স্থিতিশীল রাখা হয়েছে, এটার কারণ হচ্ছে এই সশস্ত্র বাহিনীর বহু সেনা সদস্য, সিভিলিয়ান—সবাই বিলে এই সংস্থাগুলোকে কার্যকর রেখেছে।’

‘সে জন্য এতদিন ধরে আমরা একটি সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি। এরমধ্যে যারা কাজ করেছেন, যারা অপরাধ করেছেন, তাদের অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। না-হলে এই জিনিস আবার ঘটবে। আমরা সেটাকে বন্ধ করতে চাই চিরতরে। কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে, আমরা এমনভাবে কাজটা করবো, যাতে এসব সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আজকে পুলিশ সদস্য কাজ করছে না। তার একটি বড় কারণ হচ্ছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা, অনেকে জেলে।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, তবে কাজটি এমনভাবে করতে হবে, যাতে এসব সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না-হয়। এসব সংস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যদি মনে করেন দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে, সবাই শান্তিতে থাকবেন, সেটা হবে না। সেটা সম্ভব না। আমি পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি।’

‘এই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কেবল সেনাবাহিনীর না, দুই লাখ পুলিশ আছে, বিজিবি আছে, র‌্যাব আছে, আনসার-ভিডিপি আছে। আমার আছে ত্রিশ হাজার সেনা। কিন্তু এই একটা ভয়েড (শূন্যতা), সেটা এই ত্রিশ হাজার সেনা দিয়ে কীভাবে পূরণ করবো? ত্রিশ হাজার আসে, আবার ত্রিশ হাজার ক্যান্টনমেন্টে চলে যায়, এটা দিয়ে দিন-রাত আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, এখানে যেসব উচ্ছৃঙ্খল কাজ হয়েছে, সেটা আমাদের নিজস্ব তৈরি। বিপরীতমুখী কাজ করলে দেশে কখনো শান্তি-শৃঙ্খলা আসবে না, এটা মনে রাখতে হবে।’

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমরা দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। তার আগে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, অবশ্যই সরকার সেদিকে খেয়াল করবেন। যতবার ড. ইউনূসের সাথে কথা বলেছি, ততবার তিনি আমার সাথে একমত হয়েছেন যে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার এবং সেই নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হবে। যেটা আমি প্রথমেই বলেছিলাম আঠারো মাসের মধ্যে একটি নির্বাচন। আমার মনে হচ্ছেওয়াকার-উজ-জামানসরকার সেদিকে ধাবিত হচ্ছে। ড. ইউনূস যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশটিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে। তাকে আমাদের সাহায্য করতে হবে।’