জকিগঞ্জে কুশিয়ারার পানি নিতে দিচ্ছে না বিএসএফ

চুক্তি অনুসারে শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদী থেকে বাংলাদেশের প্রতিবছর ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের কথা থাকলেও তা মানছে না ভারত। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধায় চালু করা যাচ্ছে না রহিমপুরী পাম্প হাউস।

ফলে এ সময়ে কুশিয়ারা হয়ে রহিমপুরী খাল দিয়ে সিলেটের জকিগঞ্জসহ চার উপজেলার পানি ঢোকার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এসব খাল নাব্য হারানোর কারণে ওই অঞ্চলগুলোর সেচ সুবিধা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকছে।

এই সংকট নিরসনে ২০১১ সালে রহিমপুরী খাল খনন ও শতকোটি টাকা ব্যয়ে পাম্প হাউস স্থাপনের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও বিএসএফের বাঁধার মুখে রহিমপুরী খাল ও কুশিয়ারা নদীর সংযোগস্থল খনন করতে পারেনি পাউবো। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ে প্রকল্পটি। এক সময় মরাখালে পরিণত হয় রহিমপুরী খালটি।

এই অবস্থায় ২০২২ সালের ২১ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুরী খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ও চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়।

কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের পরও বিএসএফের বাধার কারণে পাম্প হাউসটি চালু করা যাচ্ছে না। রহিমপুরী খালের উৎসমুখ (কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী অংশ) খনন করতে বাধা দেওয়ায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে পাম্প হাউস। এতে সিলেটের চার উপজেলার বিশাল কৃষি ও মৎস্য সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ‘বিএসএফের বাধার কারণে রহিমপুরী খালের উৎসমুখ খনন করতে না পারায় পাম্প হাউস চালু করা যাচ্ছে না। উৎসমুখ খনন করতে গেলেই বিএসএফ বাধা দিচ্ছে। ফলে জকিগঞ্জসহ সিলেটের ৫ উপজেলার কৃষি ও মৎস্য উন্নয়নে যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে কৃষিনির্ভর উপজেলা হচ্ছে জকিগঞ্জ। আগে সেচ সুবিধা থাকায় শুষ্ক মৌসুমেও এই উপজেলায় প্রচুর ধান ও রবি শষ্য উৎপাদন হতো। কিন্তু ওই অঞ্চলের খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় নাব্য হারায় হাওর ও বিলগুলো। ফলে সেচের সুবিধা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে এখন হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে।

স্থানীয়রা বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী রহিমপুরী খাল দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার হলে জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকার জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। রহিমপুরী খাল ও শাখা খাল দিয়ে পানি উপজেলার হাওর ও বিলগুলোতে নামার ফলে শুষ্ক মৌসুমেও খাল ও হাওর-বিলগুলো পানিতে পূর্ণ থাকতো। এই পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা যেত।

এতে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খালের গভীরতা বাড়ায় বন্যার শঙ্কাও কমতো। এছাড়া খাল, বিল ও হাওর দিয়ে পানি পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে নামতো। ফলশ্রুতিতে ওই তিন উপজেলার কৃষিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তো বলেও জানান স্থানীয়রা।