ইসি এনআইডি সেবা নিয়ন্ত্রণে রাখার পক্ষে: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিন বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাবেন।

তিনি বলেন, 'আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আমরা দৃঢ়ভাবে আমাদের মতামত জানাব। যেখানে মতামতের প্রয়োজন হবে, আমরা মতামত দেব। আমাদের পুরো কমিশন এটাই চায়।’

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তর কক্ষের সামনে ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি এ কথা বলেন।

জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সেবাসহ বেশ কিছু নাগরিক সেবাকে 'সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন' নামে একটি একক সংস্থার অধীনে আনার জন্য বর্তমান সরকার নতুন করে আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রতিবাদে আন্দোলন করছিল ইসি কর্মীরা।

আগামী ১২ মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ চান তারা। আর তা না নিলে নতুন কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য সাত দিনের আল্টিমেটামও দিয়েছেন তারা।

নাসির উদ্দিন বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডি কার্যক্রম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে বলে তিনি শোনেননি, বরং আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা সরকারকে লিখিতভাবে জানাবো, নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটি রাখতে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে অবহিত করব।

এর আগে সোমবার (৩ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে 'নাগরিক নিবন্ধন (কমিশন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর খসড়া পর্যালোচনা করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

২০২৩ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তরের জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করে।

কিন্তু জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আইনটি বাতিলের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তিনি শুনেছেন সরকার হয়তো এক জায়গা থেকে সব ধরনের সেবা দেওয়ার কথা ভাবছে, কিন্তু এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে থাকবে।

নাসির উদ্দিন বলেন, এনআইডি ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের একটি অংশ এবং ইসি কর্মকর্তারা ১৭ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে সারা দেশে এনআইডি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। ‘সরকার অবশ্যই সব বিষয় বিবেচনায় নেবে। তথ্যের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি থাকতে পারে। কমিশনের লিখিত মতামত পাওয়ার পর এই ঘাটতি আর অবশ্যই থাকবে না।’

তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার এবং সবার সম্মতির ভিত্তিতে তারা কাজ করছেন।

সিইসি বলেন, 'আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নই। আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করছি... আমি ইসির পক্ষ থেকে কথা বলতে পারি। সরকারের সামনে একটা অবস্থান তৈরি করতে পারি। আমরা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকার আইন করলে আমাদের আইন মানতে হবে। তবে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আমরা জরুরি ভিত্তিতে আমাদের মতামত তুলে ধরব।’

ইসি কর্মকর্তাদের উদ্বেগ ও কর্মসূচি সম্পর্কে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান আশা প্রকাশ করেন যে, নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডি কার্যক্রম যাতে স্থানান্তরিত না হয়, সে বিষয়ে কমিশন সব ধরনের উদ্যোগ নেবে।

তিনি বলেন, ইসির এখতিয়ার থেকে এনআইডি কার্যক্রম চলে গেলে নির্বাচন হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি স্মারকলিপি (সিইসি বরাবর) জমা দিয়েছি।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, এর আগেও একাধিকবার ইসি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এনআইডি সেবা সরানোর চেষ্টা হয়েছে। গতবার এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে স্থানান্তরের চেষ্টা থাকলেও এবার তা নতুন কমিশনের অধীনে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, কোনো না কোনো উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’

ইসি কর্তৃপক্ষের অধীনে ১৭-১৮ বছর ধরে এনআইডি কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, 'আজ আমরা মনে করি, এমন   কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি যে, এনআইডি ইসি থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হবে।’

মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা সময় দিয়ে কমিশনকে অবহিত করেছি এবং আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি আশা করছি। অন্যথায় ১৩ মার্চ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইসি সচিবালয়সহ সারাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করবেন। এরপরও যদি আমাদের দাবি মানা না হয়, তাহলে আমরা কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’