বাংলাদেশকে বিশ্বের নিখুঁত গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করবে সংস্কার: গুতেরেস

সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম নিখুঁত গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

রমজান সংহতি সফর শেষ করে আজ রবিবার (১৬ মার্চ) সকালে ঢাকা ছাড়ার আগে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

এদিন সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন গুতেরেস।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং রোহিঙ্গা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান বিমানবন্দরে মহাসচিবকে বিদায় জানান।

প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ইউএনবিকে জানান, বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং বিদায়ী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঢাকা ছাড়ার আগে গুতেরেস বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম নিখুঁত গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ যে প্রচেষ্টা নিচ্ছে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।

সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে প্রায় ১ কোটি রোহিঙ্গার সঙ্গে রমজান সংহতি ইফতারে অংশ নেন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

তিনি সংস্কার বিষয়ক একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের যুব প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন গুতেরেস।

গত ১৩ মার্চ ঢাকায় পৌঁছে গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের একগুচ্ছ প্রাতিষ্ঠানিক পূর্ণ সহায়তার ওপর নির্ভর করতে পারে— যা দেশকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে পরিচালিত করতে নাগরিকদের সক্ষম করবে।

শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজে গুতেরেস তার ও তার দলের কাজের জন্য গভীর প্রশংসা করেন।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশের সংস্কারে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের পূর্ণ সংহতির উপর নির্ভর করতে পারে।

গুতেরেস জাতিসংঘ ও এর মিশনে বিশেষ করে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সমর্থনের কথা তুলে ধরেন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ অন্যতম বৃহত্তম অবদান রাখা দেশ। বাংলাদেশের হাজার হাজার সৈন্য বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে দায়িত্ব পালন করছে।

তিনি বলেন, 'আমি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ত্যাগ ও নিষ্ঠার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই।’

১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সহায়তায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশের উদারতা 'একেবারে অসাধারণ'।

জাতসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা একটি অসাধারণ উদাহরণ হয়ে আছেন। এটা চলমান রাখা উচিত।’

গুতেরেস বলেন, যখন বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে সমাজগুলো 'শক্তিশালী ও স্থিতিস্থাপক' হয়, তখন সবাই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে 'অর্থবহ ভূমিকা' পালন করতে পারে।

জাতিসংঘ মহাসচিব তার সঙ্গে তাদের মতামত বিনিময়ের জন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান।

গুতেরেস বাংলাদেশের তরুণদের নেতৃত্ব এবং তাদের দেশের ভবিষ্যত গঠনের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘সাম্য, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতি তাদের আত্মোৎসর্গ অনুপ্রেরণাদায়ক। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তরুণদের বৈশ্বিক আহ্বান অবদান রাখে।’

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তর গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যতের আশাকে স্বীকৃতি দেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি 'উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের' মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য আপনাদের প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ভূমিকা পালন করতে হবে।’

বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুতেরেস আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা এবং স্থিতিশীলতা জোরদারে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

জাতিসংঘ প্রধান বলেন, 'আপনারা অবিচল অংশীদার হিসেবে আস্থা রাখতে পারেন যে, জাতিসংঘ সবার জন্য একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করে।’