চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার, শুনানি রবিবার
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আজ বুধবার বিকালে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ওই জামিন আদেশ স্থগিত করেন। তার কিছুক্ষণ পরে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে আগামী রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের ওই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ধার্য করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালত এই আদেশ দেন। চিন্ময় দাসের আইনজীবী অপূর্ব ভট্টাচার্য ইউএনবিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিন বিকাল ৩টার পর চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন। ওই আবেদনের ওপর চেম্বার আদালতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক শুনানি করেন। শুনানির পর চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি প্রকাশ ও নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করেন। এই আদেশের সময় চিন্ময় দাসের আইনজীবী অপূর্ব ভট্টাচার্য আদালতে ছিলেন না।
পরে এই আইনজীবী বলেন, ‘স্থগিতাদেশের খবর শুনে সন্ধ্যায় আমি চেম্বার বিচারপতির বেঞ্চ অফিসারের কাছে খবর নিতে যাই। তখন বেঞ্চ অফিসার জানান যে, ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, চেম্বার আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রবিবার শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।’
রবিবার (৪ মে) চিন্ময় দাসের পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আদালত আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জামিন চেয়ে চিন্ময় দাসের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে সময় আবেদনকারীকে (চিন্ময়) কেন জামিন দেওয়া হবে না—রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর গত ২৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য ৩০ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ (বুধবার) শুনানি নিয়ে রুল ‘অ্যাবসলিউট’ ঘোষণা করে সিদ্ধান্ত দেন হাইকোর্ট।
আদালতে চিন্ময় দাসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, প্রবীর হালদার ও অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ভুঞা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।
জামিন আদেশের পর আইনজীবী প্রবীর হালদার বলেন, হাইকোর্ট চিন্ময় দাসকে জামিন দিয়েছেন। জামিন হওয়ায় তার মুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে হাইকোর্টের রায়ের পরপরই রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। পরে সন্ধ্যায় চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানি হয়।
এই মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ গত ২ জানুয়ারি চিন্ময়ের জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। এ নিয়ে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে গত ১২ জানুয়ারি আবেদনটি করেছিলেন চিন্ময় দাস। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল দেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ সিদ্ধান্ত দেন আদালত।
মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়। সে সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আদালত গত ৩ ডিসেম্বর শুনানির দিন রাখেন। সেদিন চিন্ময় দাসের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আদালত শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন রাখেন। তবে সেদিনও তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ওই মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।