রাজনৈতিক দলগুলোকে অভিন্ন অবস্থানে আসার আহ্বান আলী রীয়াজের
দেশে পুনরায় স্বৈরশাসনের শেকড় যেন বিস্তার লাভ না করতে পারে, সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি অবিলম্বে অভিন্ন অবস্থানে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ রবিবার (৪ মে) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সকাল দশটার পরপর এ বৈঠক শুরু হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
অপরদিকে, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে এ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন-বাংলাদেশ এলডিপি'র চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট এর মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম,বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২দলীয় জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ডক্টর গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান,লেবার পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান,বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামি ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল রাকিব, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল (পিএনপি)চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন এবং নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ মান্নান।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো সকলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সনদ প্রস্তুত করা, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণ করবে। এবং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা জরুরি, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে শুধুমাত্র সেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই সনদটি তৈরি করা হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলকে কিছু না কিছু ছাড় দিতে হবে, রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক বিষয়গুলোয় সবাইকে একমত হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাদের সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। সব বিষয়ে একমত হতে পারব না, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক জায়গাগুলোতে আমাদের একমত হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে।'
ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কেবল কমিশনের নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, কমিশন এক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পারস্পরিকভাবে আলোচনা করতে হবে যে কি করে এক ও অভিন্ন জায়গায় আসা যায়। শুধু এই টেবিলে বসে, কমিশনের বৈঠকে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্যের চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছাতে পারব এটা আমরা (কমিশন) মনে করি না।
এ সময় রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে একটি অভিন্ন অবস্থানে আসার জন্য সহযোগিতা ও উৎসাহিত করতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ গভীর অন্ধকারে পতিত হয়েছিল। ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের পদতলে পিষ্ট হয়ে বাংলাদেশের মানুষ যখন আশাহত, সেই সময় তরুণদের অভ্যুত্থানের ডাকে লাখ লাখ মানুষ সাড়া দিয়েছেন। এ আন্দোলনের জন্যই আমরা এখানে সংলাপ করতে পারছি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র বিনির্মাণের ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করতে পারছি। এর যথাযথ মূল্যায়ন আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
অচিরেই সকল রাজনৈতিক দল তাঁদের ভিন্নমতের জায়গাগুলোকে সংকুচিত করে অভিন্ন অবস্থায় এসে বাকি সহযোগী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে অনুপ্রাণিত করবেন এবং এর ফলেই জুলাই সনদ রচিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দার তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, 'রাজনৈতিক মতপার্থক্যই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমরা খুব দ্রুত একটি সমাধানে পৌঁছাতে চাই। সেইসঙ্গে এটাও চাই যেন ভবিষ্যতে যেন কোন স্বৈরশাসক মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, চাইলেও সংবিধানের যেমন ইচ্ছা পরিবর্তন না ঘটাতে পারে।'
উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে সরকারের গঠিত পাঁচ কমিশনের দেয়া নানা সংস্কারবিষয়ক সুপারিশের ব্যাপারে আজ আলোচনায় বসেছে ১২ দলীয় জোট।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের দেয়া ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ১১১টিতে একমত, ৪৮টিতে দ্বিমত এবং ৭টিতে মতামত দেয়নি জোটটি।
আজ বিকেল তিনটায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির সাথে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে কমিশনের।