এশিয়ায় নেতৃত্ব দেবে জাপান, বাংলাদেশকে সহযোগিতা বাড়ানোর আশায় ড. ইউনূস

টোকিও সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন অধ্যাপক ইউনূস। এ সময় দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে।

টোকিও সফরকালে জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও গভীর হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার আশা, জাপান এশিয়ায় নেতৃত্ব দেবে এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য একটি নতুন সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবে।

টোকিওতে জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকেকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তার ক্ষেত্রে জাপান নেতৃত্ব দেখাবে এবং আমাদের দেশের সঙ্গে সহযোগিতা আরও বাড়াবে— এটাই আমার প্রত্যাশা।

সাক্ষাৎকারে জাতীয় নির্বাচনের আগে যতটা সম্ভব সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার পুরনো কাঠামো, নীতিমালা ও বিচারব্যবস্থায় ফিরতে চায় না। সেগুলো ছিল দমন-পীড়নের হাতিয়ার, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার উপায়।’

তার ভাষায়, ‘বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো রয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে এবং যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে সেগুলো পরিবর্তন করা হবে।’

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আশা করা হচ্ছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।

জাপানের কর্মী সংকট ও বাংলাদেশে উদ্যোগ

এদিকে, শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নিয়োগ দিতে চায় জাপান। এ লক্ষ্যে দেশটির রেস্তোরাঁ গ্রুপ ওয়াতামি ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে নিক্কেই এশিয়া।

খবরে বলা হয়েছে, এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে স্থানীয়দের কৃষিকাজ, গ্রাহকসেবা, কারখানায় কাজের দক্ষতা এবং খাবার সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশিকে ‘বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী ভিসা’য় জাপানে পাঠানোর লক্ষ্যে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে।

এ বছরের অক্টোবরে চালু হতে যাওয়া জাপানের প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি থাকবে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায়।

খাদ্য পরিষেবাসহ ১১টি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০২৩ সালে এন্ট্রি ভিসার আওতা সম্প্রসারণ করে জাপান। এর ফলে দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি কর্মীরা এখন দোকান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার মতো কাজে অংশ নিতে পারছেন।

ওয়াতামির চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট মিকি ওয়াতানাবে বলেন, ‘রেস্তোরাঁ ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির পথে মানবসম্পদ নিশ্চিত করা একটি বড় বাধা। সে ক্ষেত্রে নিজেদের কর্মী নিজেরাই গড়ে তুলতে পারাটা আমাদের জন্য একটি বড় শক্তি হবে।’

২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াতামি এজেন্ট নামের মানবসম্পদ উন্নয়ন ইউনিটটি ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ৯০০ বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে ছিলেন কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষানবিস ও নির্দিষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী। তাদের মধ্যে ৪০০ জনকে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত করা হয়েছে।