জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যেসব সংস্কার-প্রস্তাব মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগেই বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (১৬ জুন) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য গেছে।

সভায় জানানো হয়, ‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান ছয়টি কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তারা সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সংবিধান-সংশ্লিষ্ট ও বড় সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। তবে, যেসব সংস্কার-প্রস্তাব মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগেই বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২৫ মে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।

সভায় আরও জানানো হয়, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের বাস্তবায়নযোগ্য মোট ১২১টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৯টি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৩৮টি, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের ৪৩টি, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩টি ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।

তবে ওই সভার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাব। এই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে তুলনামূলক সহজে বাস্তবায়নযোগ্য ৮টি প্রস্তাব নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো— মহাসড়কের পেট্রোল পাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন, মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা, কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা, গণশুনানি, তথ্য অধিকার আইন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন এবং ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-সেবা।

সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে—

১. মহাসড়কের পেট্রোল-পাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ

২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা

৩. সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন

৪. বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা

৫. সকল সরকারি দপ্তরে নির্দিষ্ট বিরতিতে গণশুনানি নিশ্চিত করা

৬. তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ ও অফিশিয়াল সিক্রেট আইন-১৯২৩ পর্যালোচনা ও সংশোধন

৭. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন হিসেবে রূপান্তর করা

৮. ডিজিটাল রূপান্তর সম্পন্ন করা এবং ই-গভর্নমেন্ট ও ই-সার্ভিস ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। সভাপতির বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগ নিজস্ব বাস্তবায়ন টিম গঠন করবে এবং সময়াবদ্ধ কার্যক্রম গ্রহণ করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের তত্ত্বাবধায়নে গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের (জিআইইউ) আওতায় একটি তদারকি টিম থাকবে, যা মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও এই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের তদারকি করবে।

পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রমও এগিয়ে নিতে নিয়মিত এই ধরনের সভা আয়োজন করা হবে।

এ ছাড়াও বিগত মাসগুলোতে সরকারের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় ছোটবড় বহু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। মোট ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৬১টি সংস্কার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।