যদি বৈধ না হয় তাহলে নির্বাচন আয়োজনের কোনো মানে হয় না
দেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও উপভোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যদি বৈধ না হয় তাহলে নির্বাচন আয়োজনের কোনো মানে হয় না।
তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হলো একটি গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও উপভোগ্য নির্বাচন করা।’
সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরকালে কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেলনিউজএশিয়া (সিএনএ) টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, তা দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত বছরের জুলাইয়ের সহিংস আন্দোলনের পর প্রথমবার বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, সেগুলো অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হবে, কারণ আমাদের যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে সেটি কারচুপি ও অপব্যবহারের শিকার হয়েছে।’
সিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। পরে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ দলের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে সেই আন্দোলন প্রাণঘাতী সহিংসতায় পরিণত হয়।
এরপর স্বৈরশাসন, ব্যাপক দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের নির্মম অভিযানের অভিযোগে কলঙ্কিত শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন এই গণঅভ্যুত্থানে পতিত হয়। এরপর তিনি পালিয়ে ভারত চলে যান। তার অনুপস্থিতিতেই দেশে তার বিচার চলছে। এমনকি শেখ হাসিনার নির্দেশে গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে প্রায় এক হাজার প্রাণহানি ঘটেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।
সিএনএ জানায়, শেখ হাসিনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানোর পর তাকে ‘মিথ্যা ও মনগড়া’ বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তারা সামাজিকমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবাসনের অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাসিনাকে ভারত থেকে বের করতে আমরা সংঘাতে যাচ্ছি না। আমরা বলেছিলাম, আপনারা তাকে রাখতে পারেন। তবে আমাদের বিচার চলবে। এর মধ্যে তাকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। এখনো বাংলাদেশে তার অনেক অনুসারী রয়েছেন; তারা অতীতে যেমন দেশকে অস্থিতিশীল করেছিলেন, এখনো তেমন চেষ্টা করতে পারেন।’
সিএনএ জানায়, শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বাংলাদেশ এখানে পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
গত মাসে চীন সফরে গিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
চীন ও পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে পিছিয়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, এমন যেকোনো দেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ঢাকা।
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা ভারতের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘চীনের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ বিশেষ কিছু নয়। ভারতও চাইলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। চাইলে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে। বিষয়টি হলো সুযোগের ব্যবহার। শুধু চীনকে যে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা নয়।’
জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে না চাইলেও পরে ছাত্রনেতাদের অনুরোধে তিনি রাজি হন।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনের পর আর সরকারে থাকার পরিকল্পনা নেই তার। তবে এখন থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথে থাকবে এবং আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।