পুলিশ কনস্টেবল কেন সহকর্মীকে হত্যা করলেন?
রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনে দায়িত্বরত কনস্টেবল কাউসার তার সহকর্মী মনিরুলকে নিজের বন্দুক থেকে ৩৮ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেছেন।
খবরটি বিস্ময়কর শুধু নয়, যারপর নাই ভীতিকরও বটে।
পুলিশসদস্যরা যদি নিজেরা নিজেদের গুলি করে মেরে ফেলেন তাহলে জনগণের জানমাল যে এ বাহিনীর হাতে মোটেও নিরাপদ না তা বলাই বাহুল্য।
গত কয়েক বছরে পুলিশের যে বিমানবীকিকরণ হয়েছে এ ঘটনা তার বহিঃপ্রকাশ বৈ কিছু নয়।
২০১৫ সালে এই পুলিশেরই ১৮ রউন্ড গুলিতে নিহত হন বিরোধীদল ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনি। ঘটনার পাশবিকতা শুধু নয়— এ ধরনের অমানবিক ঘটনা আমরা গৃহযুদ্ধ-বিধধস্ত দেশগুলোতে শুধু দেখতে পাই।
গত ১৫ বছরে পুলিশকে গুম, খুন-সহ নানাবিধ অপারধে সম্পৃক্ত করে এর রাজনীতিকিকরণ করা হয়েছে।
ফলে বিরোধীদলের মিছিলে মুড়ি-মুড়কির মতো পুলিশের গুলি করা এখন স্বাভাবিক একটা বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সাধারণ একজন পুলিশ সদস্যকে হরদম ব্যাবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে এবং নৃশংসত কর্মকাণ্ডে তারা প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছেন ।
চোখের সামনে দেখা নির্যাতনের ঘটনা বা এসবে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে— এটাই স্বাভাবিক।
যে কারণে পুলিশের মনোবৈকল্যসহ নানাবিধ মানসিক অসুখে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
পুলিশের অমানবিকীকরণের বিষয়টি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এর রাজনৈতিক সমাজিক তাৎপর্য রয়েছে যার প্রতিফলন আমরা বারিধারার ঘটনায় দেখতে পাই।
কনস্টেবল কাউসার একটি এসএমটি সাবমেশিনগান বহন করছিলেন, যা ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত। এ ধরনের মারণাস্ত্র পুলিশের একজন নিন্মপদস্থ সদস্য পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে বহন করেন না।
যুক্তরাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনী অস্ত্র বহন করে। পুলিশের ভারি অস্ত্র ব্যাবহারের ঘটনা বিরল।
ঘটনার স্থল ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনের চেকপোস্ট, যা বাংলাদেশের সবচাইতে সংবেদনশীল এলাকাগুলোর একটি। জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক তিন রাউন্ড গুলিতে আহত হয়েছেন। ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় পুলিশের এরকম অসংলগ্ন আচরণ বিভিন্ন দূতাবাসগুলো কিভাবে বিবেচনা তা আমাদের সময়ই বলে দেবে।
এই বাহিনীর ব্যাপক সংস্কার আশু প্রয়োজন। আরও জরুরি দরকার পুলিশকে যারা তিলেতিলে ধ্বংস করেছে তাদের বিচার করা।
এ এম হুসাঈন: বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত লেখক ও সাংবাদিক