ভারত কি সেইন্ট মার্টিনে ঘাঁটি গাড়তে চায়?
গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের নাফ নদীর তীরে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নাফ নদী জুড়ে বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্তের লাগোয়া এলাকায় প্রায় বারোটি বর্মিজ যুদ্ধজাহাজ সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো আছে। টেকনাফ-সেইন্ট মার্টিন রুটে বেসামরিক নৌযানে গুলির ঘটনা সে জাহাজগুলো থেকেই হয়েছে বলে স্থানীয়রা বলছেন। বার্মার এই রণসজ্জার বিপরীতে বাংলাদেশের মাত্র দুটি যুদ্ধজাহাজ দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আপাতভাবে মনে হতে পারে, রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে আরাকান আর্মির মংডু ও সিতোয়ে (আকিয়াব) অভিমুখে অগ্রযাত্রা ঠেকাতে বার্মার সামরিক বাহিনীর এ রণসাজ। এরকম ভাবার কারণও আছে। কেননা সম্প্রতি জান্তা বাহিনী রাখাইনে বেশ কয়েকটি সেতু উড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে জলপথে আক্রমণ করা ছাড়া সিতোয়ে দখল করার আর কোনো উপায় আরাকান আর্মির নেই।
কিন্তু বিষয়টি এতো সহজ-সরল নয়। রোগী পরিবহনকারী জলযানসহ বাংলাদেশী সাম্পান-ট্রলার দেখলেই ওপার থেকে গুলি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের নৌযানকে লক্ষ্য করে কারা গুলি করছে, এ বিষয়ে দায়িত্বশীল মহল সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিলেও স্থানীয়দের ধারণা বার্মার রাষ্ট্রীয় বাহিনীই এ কাজ করছে। এরই মধ্যে বার্মার বিমান দ্বীপটির ওপর দিয়ে উড়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন স্থানীয়রা।
বেশ কয়েকদিন যাবত সেইন্ট মার্টিন বাংলাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। দ্বীপটিতে চলছে চরম খাদ্য সংকট।
নাফ নদীর এ পারে বাংলাদেশ। ওপারে বার্মা। বাংলাদেশের দিকে জান্তার গুলি-বোমা ছাড়ার কথা না। তাহলে এরকম হওয়ার কারণ কী?
একটি দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা মিরর এশিয়াকে জানাচ্ছেন, জান্তার আচরণের পেছনে রয়েছে ভারতের ইন্ধন। ভারতের মূল লক্ষ্য, এ এলাকায় অস্থিরতা তৈরি করে আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে ফেলে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে ঘাঁটি তৈরি করা।
যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপটিতে ঘাঁটি করতে চায় এরকম জিগির বারবার তোলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আদতে যে দেশটির এরকম কোনো ইচ্ছা নেই তা খোদ ওয়াশিংটন থেকেই বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বার্মার জান্তার সাথে ভারতের সম্পর্ক খুবই ভালো। ভারত দেশটির অস্ত্রের তৃতীয় বৃহত্তম যোগানদাতা। গত বুধবার ভারতের সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের যুগ্ম মহাপরিচালক মেজর জেনারেল চরণজিৎ সিং দেবগান ছুটে গিয়েছেন বার্মার রাজধানী নেপিদোতে। দেখা করেছেন জান্তার জেনারেল মং মং আই-এর সাথে।
জেনারেল আই মূলত বর্মী সশস্ত্রবাহিনীর হয়ে সামরিক সরঞ্জাম কেনাবেচার কাজ করেন। শুধু মেজর জেনারেল দেবগান নন। কয়েক মাসের মধ্যে বার্মা গিয়েছেন ভারতের শীর্ষস্হানীয় কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাও।
ভারতের সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (গোয়েন্দা) এয়ার ভাইস মার্শাল ইচেত্তিরা আইয়াপ্পা কুত্তাপ্পা মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর প্রধান তুন অং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কিছুদিন আগে। তার আগে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (থার্ড কোর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজিৎ সিং সাহি সাক্ষাৎ করেছেন জান্তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সো উইনের সাথে।
ভারত বার্মার জান্তা বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে বলে বেশ কয়েকটা সূত্র দ্যা মিরর এশিয়াকে জানাচ্ছে। এদের একজন জানান, সেইন্ট মার্টিনে ঘাঁটি গেড়ে কার্যত দ্বীপটির দখল নিতে চায় ভারত। এছাড়া চীনের কাছে সরকারের ঋণ চাওয়া ও প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকে ভারত ভালোভাবে দেখছে না।
ভারতের পুর্নিবাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অভিষেক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তারপর পরবর্তী সফর ঠিক হয় চীনে। কিন্ত তার আগেভাগে আবার ভারত সফরের ঘোষণা আসে। সূত্র বলছে, এ সফরে একটা ফর্দ ধরিয়ে দেওয়া হতে পারে যা বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে না।
ভূরাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেইন্ট মার্টিন রক্ষা করতে ও দেশের বাকি অঞ্চলের সাথে দ্বীপটির সাপ্লাই লাইন বা সরবরাহ ব্যবস্থা পুনরুর্দ্ধার করা এ মুহূর্তে জরুরি।
বার্মা সীমান্তে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অবস্থান মজবুত করতে হবে। নৌবাহিনীকে রণসাজে সজ্জিত করে নাফ নদী তথা বঙ্গোপসাগরে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে পাঠাতে হবে। সীমান্তে বাড়াতে হবে বিমান বাহিনীর টহল।
সেইন্ট মার্টিন বাংলাদেশের। এর এক ইঞ্চি মাটি কখনও ভারত বা বার্মার হতে দেওয়া যাবে না।