রাষ্ট্রীয় নির্মমতার শিকার খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শুধু একটি নাম নয়, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এক কিংবদন্তী নারী; যিনি গৃহবাসিনী হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। অথচ, আজ তিনি বন্দি জীবন নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
কী অবজ্ঞা, কী অবহেলায় তিল তিল করে এই নেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে একটু উন্নত চিকিৎসার সুযোগও তাকে দেওয়া হয়নি। এমনকি, দেশের একটি নামকরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি বহনের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্তু দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অথচ, এই সরকারের মন্ত্রীরা সর্দি-কাশির চিকিৎসার জন্য অহরহ বিদেশে যাচ্ছে।
কী অপরাধ খালেদা জিয়ার? কী ক্ষতি তিনি করেছেন এ দেশের? বিদেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের কথা ভাবা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, সে অপরাধে পৃথিবীর বহু দেশে বহু মহাপুরুষের প্রাণনাশের ইতিহাস আমাদের জানা আছে।
খালেদা জিয়া সাবেক প্রেসিডেন্টের সম্মানিত স্ত্রী। শুধু তাই নয়, তিনি এ দেশে তিন তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ সব কিছু বাদ দিলেও একজন সন্মানিত নারীর প্রতি যে নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে, এর হয়তো একদিন এই সভ্য সমাজে কড়ায়-গন্ডায় হিসাব হবে।
পাঠক একটু ভেবে দেখুন, কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই গৃহবধূ থেকে সরাসরি বিএনপির হাল ধরে স্বৈরাচারবিরোধী নব্বইয়ের গণআন্দোলনের নেতৃত্ব যেভাবে তিনি দিয়েছিলেন তা ছিল অবিস্মরণীয়। আপোষের চোরাবালিতে তিনি পা দেননি। তখন যদি সেটা দিতেন, তাহলে আজ হয়তো তাকে এই করুণ অবস্থায় পড়তে হতো না। অনেকবার সে সুযোগ এসেছিল। ১৯৯২ সালে বার্মা ইস্যুতে মার্কিনীদের কথা শুনলে তিনি ১৯৯৬ সালে ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতেন না। আজ তিনি থাকতেন অন্য উচ্চতায়।
কিংবা এক-এগারোর পর তিনি যদি জেনারেল মঈন ইউ গংদের সঙ্গে আপোষরফায় যেতেন, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসের চাকা আজ অন্যখাতে পরিবাহিত হতো। বিএনপির মধ্যে অবিলম্বে যারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলেন, তারা মনে করেন ওইসব সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তারা মনে করেন, তখন খালেদা জিয়া নমনীয় হলে আজ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতো। কিন্তু একদিন প্রমাণিত হবে যে, দেশপ্রেমের কোনো সহজ-সোজা পথ নেই। ইতিহাসের পাতায় সেই সব বিপ্লবীদের কথা লিপিবদ্ধ আছে যারা দেশকে ভালোবেসে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তাই আজ এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, সে সময়ের বেগম খালেদা জিয়ার সেই অনমনীয় দৃঢ়তাই এখন জাতীয়তাবাদীদের অনুপ্রেরণার উৎস। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার এই জীবন উৎসর্গকে অনুধাবন করতে পারছেন না বলেই মনে হয়। হয়তো এ দেশের মানুষই এ রকম। সিরাজউদ্দৌলা ঠিকই তা ভালোভাবে বুঝেছিলেন। বৃটিশরা আরও বেশি বুঝেছিল। তাই মাত্র ৫০ হাজার সৈন্য দিয়ে পোনে দুইশ’ বছর ভারতবর্ষ শাসন করেছিল।