উপনিবেশ, সাম্রাজ্যবাদ ও গণমাধ্যম
লেখাটি গণমাধ্যম নিয়ে তিন কিস্তিতে লেখা একটি নিবন্ধের প্রথমাংশ। বাকি দুই অংশ হচ্ছে ‘ফিলিস্তিন ও গণমাধ্যম’ এবং শেষাংশ ‘ভূরাজনীতি ও বাংলাদেশের গণমাধ্যম’।
পর্ব-১ পড়তে ক্লিক করুন- এখানে
এ ছাড়া কৌশলগত এবং জাতীয় নিরাপত্তা ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণকে ন্যায়সংগত প্রমাণের প্রয়াস সবসময়ই ছিল। পাশ্চাত্য গণমাধ্যমগুলো জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং বৈশ্বিক শক্তি নিশ্চিত করতে সাম্রাজ্য রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্প্রসারণের গুরুত্বের ওপর সবসময়ই জোর দিয়েছে। স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবসময়ই পাশ্চাত্য গণমাধ্যম অপরিহার্য হিসাবে চিত্রিত করেছে (Gallagher and Robinson 2024) । ঔপনিবেশিকতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য এক্সপ্লোরার বা অনুসন্ধানমূলক মিশন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা পাশ্চাত্য গণমাধ্যমগুলো সব সময় ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমের আকর্ষণীয় রিপোর্ট সব সময় নতুন দেশ বা মহাদেশের আবিষ্কারক, অভিযাত্রী এবং বিজ্ঞানীদের মহিমান্বিত করেছে। কারণ এর সঙ্গে নতুন ভূমি ‘আবিষ্কার’ জড়িত। যেসব ভূমি ঔপনিবেশিক শক্তি নিজের দখলে নিতে পারে এবং জনগোষ্ঠিকে ঔপনিবেশিক শক্তির পদানত করা যায়।
স্থানীয় অধিবাসীদের পরাধীন করার কার্যকলাপ বা প্রক্রিয়াকে অনেক সময় জ্ঞানের মহৎ সাধনা হিসাবে হাজির করা হয়েছে। পাশ্চাত্য গণমাধ্যম অভিযাত্রী এবং বিজ্ঞানীদের অবদানকে সব সময় এ যুক্তিতে উদযাপন করে যে ঔপনিবেশিকতা গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে সম্ভব ও সহজ করে তুলেছে। সাহিত্য এবং রাজনৈতিক কার্টুনগুলি উপনবেশিত জনগণকে একটা স্টেরিওটাইপে হাজির করে, যাতে তাদের নিকৃষ্ট ও অসভ্য হিশাবে চিত্রিত করা যায়। এর উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাকে শক্তিশালী করা। ঔপনিবেশিক পণ্যের বিজ্ঞাপনগুলিও এমন ভাবে করা হোত যেন উপনিবেশগুলিতে ইউরোপীয় উপস্থিতি কারণে পরাধীন জাতি সভ্যতার সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারছে । সাহিত্যকর্ম এবং রাজনৈতিক কার্টুনগুলো প্রায়শই উপনিবেশিত জনগণকে স্টেরিওটাইপিক্যাল এবং অবমাননাকর উপায়ে চিত্রিত করে, যা ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাকে শক্তিশালী করে ( Said 2003)।
ঔপনিবেশিক আমলে বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে ঔপনিবেশিকতাকে ন্যায্যতা ও বৈধতা দিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঔপনিবেশিকতাকে সভ্যতার মিশন হিসাবে প্রণয়ন করা, অর্থনৈতিক সুবিধার ওপর জোর দেওয়া, জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাগুলি প্রচার করা এবং কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা হাইলাইট করার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যম সাম্রাজ্যবাদী নীতিগুলির জন্য জনসমর্থন তৈরি এবং বজায় রাখতে নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছে। গণমাধ্যম আগে যেমন, তেমনি এখনও ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে জনমত গঠন ও জনমত প্রভাবিত করতে ভূমিকা রাখে।
ঔপনিবেশিক আমলে পাশ্চাত্য গণমাধ্যমে উপনিবেশিত অঞ্চলগুলিকে অদ্ভুত, রহস্যময়, রহস্যে ঘেরা বা ‘এক্সোটিক’ দেশ হিশাবে হাজির করবার পেছনেও ঔপনিবেশিক বাঞ্ছা কাজ করেছে। যার মতলব ছিল এই দেশগুলোর রহস্য ভেদ করবার জন্য দেশগুলোতে অভিযান চালানো দরকার। উপনিবেশিত দেশগুলোতে ‘পশ্চাৎপদ’ হিসাবে চিত্রিত করার উদ্দেশ্যও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদি দেশগুলোর দ্বারা হস্তক্ষেপ ন্যায্য প্রমাণ করবার যুক্তি। এডওয়ার্ড সাঈদ তাঁর বিখ্যাত ‘ওরিয়েন্টালিজম’ বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে পশ্চিমা গণমাধ্যম প্রাচ্যের এমন এক চিত্র আঁকে যার উদ্দেশ্য পাশ্চাত্যের আধিপত্যকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করা (Said 2003) । পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের রাজনৈতিক কার্টুন এবং সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপনগুলো প্রায়ই বর্ণবাদী ব্যঙ্গচিত্রের অধিক কিছু হয়ে উঠতে পারে না। প্রাচ্য সম্পর্কে পাশ্চাত্যের স্টেরিওটাইপ ধারণা তৈরির ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশ্চাত্যের বাইরের জনগণ নিকৃষ্ট এবং পাশ্চাত্য সভ্যতা এবং শাসন গ্রহণ করা ছাড়া তাদের মুক্তির আর কোন পথ নাই -- এই ধারণা বদ্ধমূল করে তোলার পাশ্চাত্যের গবেষণা, সাহিত্য ইত্যাদির পাশাপাশি গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে খ্রিস্টান মিশনারিদের রিপোর্ট এবং জার্নালগুলোও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষত যখন মিশনারি প্রকাশনায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ‘বর্বর’ অবস্থা তুলে ধরা হয় এবং তাদেরও সেই হাল থেকে উদ্ধারের জন্য পশ্চিমা ধর্মীয় খ্রিষ্টীয় শিক্ষা এবং ঔপনিবেশিক শিক্ষাকেন্দ্রিক বিভিন্ন হস্তক্ষেপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। ২০ শতকের গোড়ার দিকে, পশ্চিমা দেশগুলোতে শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র এবং রেডিও প্রোগ্রামগুলিতে প্রায়ই দাবি করা হোত যে ঔপনিবেশিক শক্তির একটি নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে ঔপনিবেশিকতার অধীন জনগোষ্ঠিকে শিক্ষিত এবং উন্নীত করা। এটা ছিল উপনিবেশবাদকে ন্যায্য প্রমাণের খুবই জনপ্রিয় একটি যুক্তি (Comaroff and Comaroff 1991) ।
ঔপনিবেশিক দেশগুলোর গণমাধ্যমগুলো প্রায়শই নিজ দেশের জন্য উপনিবেশবাদের অর্থনৈতিক সুবিধা তুলে ধরেছে (Gallagher and Robinson 2024) । উপনিবেশ থেকে অর্জিত সম্পদ এবং সম্পদের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। যুক্তি দেখিয়েছে উপনিবেশবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ জাতীয় সমৃদ্ধির জন্য উপকারি (Curtin 1964) । ঔপনিবেশিক দেশগুলোর প্রবন্ধ এবং সম্পাদকীয়গুলি প্রায়ই দাবি করেছে জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক শক্তির জন্য কৌশলগতভাবে উপনিবেশ অপরিহার্য। কিম্বা সাম্রাজ্য বজায় রাখা এবং সম্প্রসারণ করা জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় (Hobson 2018) ।
উপনিবেশ বা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম জাতিবাদী বয়ান তৈরিতে ভূমিকা রাখেনি তা নয়, কিন্তু সেটা বাহ্যিক আধিপত্য থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে নিজেরা নিজেদের ঔপনিবেশিক ‘সভ্যতার মিশন’ জারি বা কায়েম রাখা মাত্র। শুরুর দিকে দুর্বল, সংকীর্ণ ও প্রান্তিক থাকলেও উপনিবেশ বিরোধী জাতীয় সংগ্রাম দানা বেঁধে ওঠার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে, নতুন জাতিবাদী শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে এবং ঔপনিবেশিকতার রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে গিয়েছে। জাতিবাদ উপনিবেশ বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ‘সভ্যতার মিশন’ স্বয়ং সফল করবার দায় জাতিবাদীরা জেনে বা না জেনে নিজের কাঁধে নিজে বহন করে চলেছে। নৃবিজ্ঞান, ভ্রমণ সাহিত্য এবং সরকারী নীতি পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে ইতিহাস বিচার করলে দেখা যায় বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ, সংস্কৃতি এবং ঔপনিবেশিকতার মধ্যে সম্পর্ক আমরা যতো সরল ভাবি, সেটা মোটেও তেমন সরল নয়। ঔপনিবেশিকতা নিছকই একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ ছিল না বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রকল্পও বটে। ফলে ঔপনিবেশিক শাসন কলোনিয়াল শক্তিকে যেমন, তেমনি উপনিবেশ বিরোধী চিন্তা, সংস্কৃতি ও শক্তিকেও রূপ দিয়েছে। উপনিবেশকারী এবং উপনিবেশের ভিকটিম উভয়কেই গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
নিকোলাস টমাস এই দিকটার ওপর বিশেষ ভাবে জোর দিয়েছেন। সংস্কৃতি ছিল যুগপৎ ঔপনিবেশিকতার হাতিয়ার এবং ফলাফল। উভয়ই। ঔপনিবেশিকতার প্রক্রিয়া পরাধীন জাতির ওপর ঔপ্নিবেশিক সংস্কৃতি আরোপ করার মধ্য দিয়ে উপনিবেশ বিরোধী কর্তাসত্তাও পয়দা করেছে। বাংলাদেশে আমরা আমাদের জাতীয়বাদসহ চিন্তা চেতনায় ঔপনিবেশকতারই ফল। হাইব্রিড সংস্কৃতি কিম্বা জাতিবাদী চেতনা দ্বারা একে পুরাপুরি বোঝা যাবে না। উপনিবেশ বিরোধী জাতিবাদসহ ঔপনিবেশিকতা বৈশ্বিক ইতিহাসের অন্তর্গত প্রক্রিয়া। চরম উপনিবেশ বিরোধিতার পরও আমরা চেতনা, বুদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ভাবে ইংরেজের ঔরসজাত।
ঔপনিবেশিক শাসন মজবুত ও জারি রাখার ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। নৃতাত্ত্বিকদের কাজ ঔপনিবেশিক প্রশাসকদেরই ক্ষমতা প্রয়োগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কাজে আসত। নৃতত্ত্ব আদিতে ঔপনিবেশিক প্রশাসনকে আদিবাসীদের রীতিনীতি, সামাজিক কাঠামো এবং বিশ্বাস ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য ও খোঁজখবর দেবার চর্চা। পরাধীন জনগোষ্ঠির খোঁজখবর নেওয়া, গবেষণা-বিশ্লেষণ করা, নৃতাত্ত্বিক জ্ঞান-গরিমা প্রচারের দ্বারা ঔপনিবেশিক প্রশাসনকে পরাধীন জনগোষ্ঠিকে পরাধীন রাখবার ফন্দি-ফিকির তৈরিতে সহায়তা করার চর্চা থেকেই নৃতত্ত্বের জন্ম। এর দ্বারা ঔপনিবেশিক শক্তি আরও কার্যকরভাবে পরাধীনদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে সক্ষম হয় (Pels and Salemink 2000) । কলোনির জনগোষ্ঠির ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মাচার ইত্যাদি জেনে সে সবের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে কলোনিয়াল শাসনের রূপ তৈরি হয়েছিল।
প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ শাসনের নীতি ও কৌশল কখনও বিদ্যমান স্থানীয় কাঠামোর মাধ্যমে কিম্বা কখনও তাদের তার সংস্কারের মধ্য দিয়ে প্রণীত হোত। অর্থাৎ ঔপ্নিবেশিকতা এক পক্ষীয় প্রক্রিয়া মাত্র ছিল না। ঔপনিবেশিক সম্বন্ধের টানাপোড়েনের মধ্যে উভয় পক্ষেরই রূপান্তর ঘটছিলো।
৩. জাতির ভাগ্য বা ইতিহাসের নিয়তিবাদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং তাদের ভূমি থেকে তাদের উৎখাত করে সেটলার কলোনিয়াল রাষ্ট্র গড়ে তোলার পেছনে যে মতাদর্শ ইউরোপীয় ও মার্কিন গণমাধ্যম ব্যবহার করেছিল সেটা ‘Manifest Destiny’ নামে পরিচিত। ‘ম্যানিফেস্ট ডেসটিনি’ হলো ১৯ শতকের একটি মতবাদ বা বিশ্বাস। এর সার কথা হোল, বিভিন্ন জাতির ভাগ্য ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত। উত্তর আমেরিকা মহাদেশজুড়ে স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ান্দের হত্যা, উৎখাত এবং তাদের ভূখণ্ড দখল করা বা সেটলার কলোনিয়াল ভূখণ্ড সম্প্রসারণ ন্যায্য। কারণ তাদের নিয়তি আল্লার দ্বারাই পূর্বনির্দিষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সম্প্রসারণকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য পূর্ব নির্ধারিত নিয়তির ধারণা ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা ছিল উত্তর আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গদের বসতি গড়ে তোলা, পশ্চিমমুখী আন্দোলন, সম্প্রসারণ এবং বৃহৎ ভূমি সংযুক্ত করার মতাদর্শিক তত্ত্ব । ‘মেনিফেস্ট ডেসটিনি’ কথাটি ১৮৪৫ সালে সাংবাদিক জন এল. ও; সুলিভান বানিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও সভ্যতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উত্তর আমেরিকা জুড়ে পশ্চিম দিকে প্রসারিত করার ঐশ্বরিক অধিকার শ্বতাঙ্গদের রয়েছে। মার্কিনরা নিজেদের বিশ্বে ব্যাতিক্রম গণ্য করা প্রভিডেন্সের অর্থে গভীরভাবে প্রোথিত ছিল।
ম্যানিফেস্ট ডেসটিনি ধারণার ব্যবহার হয়েছিল ১৮৪৫ সালে টেক্সাসের সংযুক্তিকরণ, ওরেগন ট্রেইল মাইগ্রেশন এবং মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে (১৮৪৬-১৮৪৮) যার ফলস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, উটাহ, অ্যারিজোনা এবং নিউ মেক্সিকো অধিগ্রহণ করে (Merk and Merk 1966) । এই মতবাদ, বলা বাহুল্য, আমেরিকার আদিবাসী এবং মেক্সিকান নাগরিকদের সার্বভৌমত্ব এবং অধিকারকে অস্বীকার ও উপেক্ষা করে। ম্যানিফেস্ট ডেসটিনি ছিল একটি শক্তিশালী মতাদর্শ যা ১৯ শতকে আমেরিকান সম্প্রসারণবাদ এবং সেটলার কলোনিয়াল স্টেট হিশাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠন করেছে। মার্কিন জনগোষ্ঠি অন্য সকল জাতির চেয়ে ব্যতিক্রম, জাতিগত ভাবে শ্রেষ্ঠ এবং ‘গণতন্ত্র’ ছড়িয়ে দেওয়া তাদের লক্ষ্য ছিল।
৪. সাম্রাজ্যবাদ, গণমাধ্যম ও ভূরাজনীতি
সাম্রাজ্যবাদের যুগে ১৯ শতকের শেষে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে, মার্কিন সংবাদপত্র, সাম্রাজ্যবাদী উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছিল। যেমন স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধ। উইলিয়াম র্যান্ড্রলফ হার্স্টের (William Randolph Hearst) মালিকানাধীন পত্রিকাগুলো খোলাখুলি সেটা করেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণ নিপীড়িত জনগণকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা রাখে এটা প্রমাণ করা প্রধান গণমাধ্যমগুলোর প্রধান মতাদর্শিক কর্তব্য হয়ে উঠেছিল (Kinzer 2007) ।
জনমত গঠন করতে এবং তার সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য প্রচারকে ইংরেজ ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করেছিল। ইংরেজ ‘সভ্য শক্তি’ এবং উপনিবেশের জনগণের ভালো করবার জন্যই এসেছে এ প্রচার দ্বারা ঔপনিবেশিক ইংরেজ তাদের শাসনকে ন্যায্য প্রমাণ করতে চেয়েছে। সে ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল প্রধান। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ধারণাকে একটি হিতৈষী এবং সভ্য শক্তি হিসাবে প্রচার করার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে গণমাধ্যমের প্রচার ছিল অন্যতম। ঔপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী নীতি এবং কর্মের জন্য জনসমর্থন অর্জন ছাড়া বৃটিশ শাসন দীর্ঘস্থায়ী করা যেত না (MacKenzie 2003) । উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবাদ শ্বেতাঙ্গদের একটি নৈতিক দায়িত্ব এবং ‘সভ্যতার মিশন’।
তবে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সাম্রাজ্যপন্থী বার্তা প্রচারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। স্কুলের পাঠ্যক্রমে সাম্রাজ্যের ইতিহাস, ভূগোল এবং উপনিবেশপন্থি বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বই এবং শিশু সাহিত্য সবসময়ই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে ইতিবাচক ভাবে হাজির করেছে। দুঃসাহসিক গল্প এবং ভ্রমণ কাহিনী ঔপনিবেশিক শোষণ এবং বসতি স্থাপনকারীদের মহিমা প্রকাশ করেছে এবং সৈন্যদের জীবনকে রোমান্টিক আখ্যান দান করেছে। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং মেলার ভূমিকা ছিল। সাম্রাজ্য প্রদর্শনী, উপনিবেশের সম্পদ এবং বৈচিত্র্য প্রদর্শন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অর্জনগুলি প্রদর্শন করবার মধ্যে একদিনে পরাধীন জনগোষ্ঠীর মনে হীনমন্যতা তৈরি এবং অন্যদিকে সাম্রাজ্যের মহিমা প্রতিষ্ঠা ছিল কলোনিয়াল শাসন আকর্ষণীয় ও বৈধ করবার গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ও পদক্ষেপ। পোস্টার, পেইন্টিং এবং চলচ্চিত্রগুলিও সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টাকে মহিমান্বিত করতে ভূমিকা পালন করেছিল। গণমাধ্যমের প্রচারণা ঔপনিবেশিক শাসনের অন্তর্নিহিত শোষণ ও সহিংসতার চেহারার ওপর মুখোশ পরিয়ে দেয়। ঔপবেশিকতার একটা সাফ চেহারা বা আদর্শিক চিত্র হাজির করে।
৫. স্নায়ুযুদ্ধ, কমিউনিজম এবং গণমাধ্যম
স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন গণমাধ্যমগুলো কমিউনিজম বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে। ধর্মকে গণআন্দোলন ও গণসংগ্রাম বিরোধিতার কাজে ব্যবহার করেছে। কমিউনিজম ও নাস্তিকতা সমার্থক এই প্রবল প্রচার স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিশেষ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। রেডিও প্রোগ্রামগুলিতে কমিউনিস্ট বিরোধী বার্তা প্রচারিত হয়েছে। প্রায়ই সবসময়ই এই যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে নাস্তিকতা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ক্ষতি এবং নৈতিক অবক্ষয়ের সঙ্গে যুক্ত। এ মতাদর্শিক লড়াই ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের ফলাফলকে গভীর ভাবে প্রভাবান্বিত করেছে।
মার্কিন মিডিয়াগুলো স্নায়ুযুদ্ধের সময় কমিউনিস্টদের নাস্তিক হিসাবে প্রবল ভাবে প্রচার করেছিল এবং কমিউনিস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের উস্কে দেবার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কমিউনিস্টদের নাস্তিক হিসাবে চিত্রিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মতাদর্শিক লড়াই যার প্রতি কমিউনিস্টরা নিজেরাও সায় দিয়েছে। এর গভীর ও স্থায়ী ফল ধর্মীয় আমেরিকান সমাজকে শুধু অনুরণিত করেনি সকল ধর্মের মানুষকেই কমিউনিজমকে এই বিশেষ চোখ দিয়ে দেখা ও বিচার করবার মূল সূত্রে পরিণত করেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে এর ফল হয়েছে গভীর ও নেতিবাচক। কমিউনিস্ট রাশিয়ার প্রভাব প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচারকে খুবই সফল ভাবে কাজে লাগিয়েছে। এর প্রতি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলিরও প্রবল সমর্থন ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য কমিউনিস্ট দেশগুলিতে ধর্ম দমন করা হয় আমেরিকান সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনগুলি প্রায়শই তার ওপর বিশেষ ভাবে জোর দিত। কমিউনিস্ট শাসনের নাস্তিকতার প্রকৃতি এই প্রপাগান্ডা সফল ভাবে তুলে ধরতে পেরেছিল এবং মতাদর্শিক ভাবে কমিউনিস্ট কালপর্বকে সংক্ষিপ্ত করবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। হলিউড অসংখ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেছে যেখানে কমিউনিস্টদের ঈশ্বর বা আল্লা-খোদাহীন অনৈতিক শক্তি বা ‘ইভিল’ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। এ ধরনের প্রপাগান্ডা একটি সত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে যে কমিউনিজম আদর্শগত ভাবেই আমেরিকান ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধী।
প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার সহ মার্কিন রাজনীতিবিদরা কমিউনিজমকে নাস্তিকতার সাথে যুক্ত করে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছেন। আইজেনহাওয়ারের বিখ্যাত একটি উক্তি, হচ্ছে ‘Our government makes no sense unless it is founded in a deeply felt religious faith—and I don’t care what it is’ ( “আমাদের সরকারের কোন মানেই দাঁড়ায় না যদি গভীরভাবে অনুভূত ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর তা প্রতিষ্ঠিত না হয়, এবং সেটা কী তা আমি চিন্তা করি না”।) আইজেনহাওয়ারের এই কমিউনিস্ট বিরোধী বাগাড়ম্বরের মধ্যে ধর্ম এবং দেশপ্রেমের আন্তঃসম্পর্ক যেভাবে দাবি করা হয়েছে, সেটাই মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। কমিউনিজমের নাস্তিকতা আমেরিকান জীবনযাত্রার জন্য সরাসরি হুমকি মার্কিন গণমাধ্যম সবসময়ই এই দাবি নানা ভাবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছে (Heale 1990) ।
আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের সময় (১৯৭৯-১৯৮৯) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগান মুজাহিদিন যোদ্ধাদের যথেষ্ট সমর্থন প্রদান করেছিল। এরা ছিল সোভিয়েত বাহিনীর বিরোধিতাকারী ইসলামপন্থী বিদ্রোহী। সিআইএ-এর ‘অপারেশন সাইক্লোন’ কমিউনিস্ট বিরোধী ইসলামপন্থিদের অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুজাহিদিনদের সম্পদ সরবরাহের জন্য পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের সাথে জোট গঠন করে। মার্কিন গণমাধ্যম আফগানদের লড়াইকে নাস্তিক্যবাদী কমিউনিজমের বিরুদ্ধে একটি পবিত্র যুদ্ধ হিসেবে প্রচার করেছে। এই আখ্যানের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সংগ্রামের ধর্মীয় মাত্রার ওপর জোর দিয়ে মুসলিম দেশ এবং সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়। বিভিন্ন প্রচার সামগ্রী, লিফলেট, পোস্টার এবং রেডিও সম্প্রচার সোভিয়েত আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ উৎসাহিত করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এ প্রচার সোভিয়েত শাসনের নাস্তিকতাবাদী দিকটিকে বিশেষ ভাবে হাইলাইট করেছে এবং জিহাদের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতি বিপুল ভাবে ব্যবহার করেছে। সেটা সফল হয়েছে বলা যায় (Coll 2004) ।আফগানিস্তানে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলির জন্য মার্কিন সমর্থনের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল হচ্ছে তালেবান এবং পরোক্ষভাবে আল-কায়েদার উত্থান (Rashid 2001) ।
আফগানিস্তানকে আগ্রাসী শক্তির কবল থেকে মুক্ত করবার ন্যায্য কারণ হাজির ছিল অবশ্যই, কিন্তু মতাদর্শ, গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং প্রচার আফগানিস্তানের বৈদেশিক আগ্রাসন প্রতিরোধের যে বিশেষ ধর্মীয় রাজনৈতিক আদর্শকে শক্তিশালী করেছে সেখানে মার্কিন পরররাষ্ট্র নীতি এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে । কমিউনিস্টদের নাস্তিক হিসাবে চিত্রিত করা এবং নাস্তিক কমিউনিস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইসলামি অনুভূতিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে, মার্কিন মিডিয়া এবং সরকার যে দীর্ঘ প্রচার যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে তার ভূরাজনৈতিক পরিণতি সুদূরপ্রসারি হয়েছে। কমিউনিস্টদের গায়ে নাস্তিক হিশাবে যে তকমা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে, সেই ফাঁদ থেকে আজ অবধি কমিউনিজম কিম্বা কমিউনিস্টরা মুক্ত হতে পারে নি। ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক দুর্দশা এবং মতাদর্শ হিশাবে ক্ষয়ের প্রধান একটি কারন স্নায়ুযুদ্ধের সময় কমিউনিজমের বিরুদ্ধে মার্কিন বা পাশ্চাত্যপন্থী পত্রপত্রিকার নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার। ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার ওপর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাফল্য আদতে গণমাধ্যমের সাফল্যই বটে (Heale 1990) ।
আমেরিকান সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনগুলি প্রায়শই সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য কমিউনিস্ট দেশগুলিতে ধর্মের দমনের ওপর জোর দিয়ে কমিউনিস্ট শাসনের নাস্তিকতার প্রকৃতি তুলে ধরে। এই চিত্রায়নের উদ্দেশ্য ধর্মীয় আমেরিকানদের মধ্যে ভয় ও বিরোধিতা জাগিয়ে তোলা। হলিউড অসংখ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেছিল যেগুলো কমিউনিস্টদেরকে ঈশ্বরহীন এবং অনৈতিক হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। কমিউনিজম জন্মগতভাবে আমেরিকান ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধী – এটা ভাল ভাবেই প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। রেডিও প্রোগ্রামগুলি কমিউনিস্ট বিরোধী বার্তা নিত্যই প্রচার করে। প্রায়শই নাস্তিকতাকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ক্ষতি এবং নৈতিক অবক্ষয়ের সঙ্গে যুক্ত করে প্রচার করা হয়। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের সময় (১৯৭৯-১৯৮৯) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগান মুজাহিদিন যোদ্ধাদের যথেষ্ট সমর্থন প্রদান করেছিল, যারা সোভিয়েত বাহিনীর বিরোধিতাকারী ইসলামপন্থী বিদ্রোহী ছিল। এই সহায়তার মধ্যে সিআইএ-এর অপারেশন সাইক্লোনের মাধ্যমে অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত ছিল। মার্কিন মুজাহিদিনদের সম্পদ সরবরাহের জন্য পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের সাথে জোট গঠন করে। এই দেশগুলি সোভিয়েত প্রভাব মোকাবেলায় মার্কিন স্বার্থ ভাগ করে নিয়েছে এবং ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করার জন্য তাদের নিজস্ব প্রেরণা ছিল। আফগানিস্তানের সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহেদিনদের লড়াইকে মার্কিন মিডিয়া নাস্তিক্যবাদী কমিউনিজমের বিরুদ্ধে একটি পবিত্র যুদ্ধ হিসেবে হাজির করেছিল। এ আখ্যানটি সংগ্রামের ধর্মীয় মাত্রার ওপর জোর দিয়ে মুসলিম দেশ এবং সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায করতে পেরেছিল। সেই মার্কিন গণমাধ্যমগুলো আবার ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ সংক্রান্ত বয়ান জোরেসোরে প্রচার করেছে এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। প্রচার সামগ্রী, লিফলেট, পোস্টার এবং রেডিও সম্প্রচারসহ, সোভিয়েত আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের সেক্যুলার গণমাধ্যমগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এ জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। এ উপকরণগুলো প্রায়শই সোভিয়েত শাসনের নাস্তিকতাবাদী প্রকৃতিকে হাইলাইট করেছে এবং সমর্থন জোগাড় করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতি সজ্ঞানে ব্যবহার করেছে। প্রপাগান্ডা যুদ্ধ পরিচালনার অন্যতম হাতিয়ার।
আফগানিস্তানে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর জন্য মার্কিন সমর্থন দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলই আসলে তালেবান এবং পরোক্ষভাবে আল-কায়েদার উত্থানে অবদান রেখেছিল।