শেখ হাসিনা হুড়মুড় করে চীন থেকে দেশে ফেরত আসছেন কেন?
শেখ হাসিনার এবারকার চীন সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা বেসামাল। এরকম একটা সংকটপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজছে আওয়ামী লীগ সরকার। কথা ছিল বেইজিং থেকে হাসিনা ঋণ পাবেন বেশ মোটা অঙ্কের। সই হবে বেশ কয়েকটি চুক্তি।
কিন্তু বিধি বাম। বলার মতো বড় কোন চীনা নেতার সাথে দেখা করার সুযোগই পাননি শেখ হাসিনা। তিস্তা মেগা প্রোজেক্ট নিয়ে চীনের কোন আলাপ-আলোচনার খবর মিলেনি। মেলার কথাও না। তিস্তার মুলা চীনের সামনে বছরের পর পর বছর ঝুলিয়ে রেখে সেটা তিনি খেতে দিয়েছেন ভারতকে।
সত্যি কথা বলতে কি, বাধ্য হয়েছেন দিতে। জিনিসটা এখানেই কিন্তু শেষ না। যে চীন বেশ সাফল্যের সাথে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করে, সে চীনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভারতের সাথে সামরিক সরঞ্জাম বানানোর চুক্তি করতে যাচ্ছেন হাসিনা। আর এসব কথাবার্তা তিনি দিল্লিতে বলে এসেছেন চীন যাওয়ার আগেই।
চীনের অপমানিত বোধ করার কারণের ফর্দটা আগে থেকেই বেশ লম্বা। কিন্তু দেশটি এতদিন হাসিনার এসব কাজকর্ম সহ্য করেছে বেশ বিমল বদনে। তিস্তা সম্ভবত সেই জোয়ারটা যা চীনের সীমাহীন ধৈর্যের বাধ অবশেষে ভেঙে দিল। শেখ হাসিনা যে বিশাল দলবল নিয়ে বেইজিং সফরে গেলেন, সে সফরের ফলাফল আসল একটা বিশাল অশ্বডিম্বের আকারে।
আওয়ামী লীগ সরকার এতদিন টাকা-পয়সার জন্য হাত পাততো চীনের কাছে। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল সব শ্বেতহস্তী প্রোজেক্ট করে চমকে দিত দেশের মানুষকে।
কিন্তু কার্যত, যত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সব দেয়া হয় ভারতকে। রেল ট্রানজিট পাচ্ছে ভারত। বন্দরের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা ভারতকে। ভাবখানা এরকম, চীন বাংলাদেশকে তার খাজাঞ্চিখানার দরজা খুলে দিয়েছে, যাতে ভারত সব লুটে নিতে পারে। যে পদ্মা সেতু বানাতে সহায়তা করল চীন, সেটা দিয়ে নাকি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাবে ভারতের পণ্য।
চীন বাংলাদেশের একটি পরীক্ষিত বন্ধু। চীন কখনই বাংলাদেশের ভালো ছাড়া কোন কিছু চায়নি। প্রকৃতপক্ষে সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে চিন্তা করলে একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ চীনের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের জন্যও দরকারী। ভারত অপরপক্ষে তার প্রতিবেশীদের মধ্যে অসম্ভবরকম অজনপ্রিয় একটি দেশ। গুলি করে নিরীহ বাংলাদেশিদের মেরে ফেলা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে চুরি করে গোপনে কাজ করা— হেন কোন অপকর্ম নেই যা ভারত করে আসছে না।
কিন্তু ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে হাসিনার তো দরকার ভারতকে। এই প্রেক্ষাপটে হাসিনার চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরত আসা তাই গুরুত্বপূর্ণ বটে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একজন সরকারপ্রধানের এরকম সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসার ঘটনা ঘটেছিল মাত্র একবার— ১৭ আগস্ট, ২০০৫ সালে ৬৩টি জেলায় জেএমবির বোমা হামলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরত আসেন।
প্রায় ১৯ বছর পর এ কাজটি করলেন হাসিনা। কিন্তু দেশে কোনো বোমাও ফোটেনি, ২০০৫ এর মতো জঙ্গি হামলায় কেউ মারাও যায়নি। হাসিনার সফর সংক্ষিপ্ত করার কারণ একটিই। চীনকে তিনি ‘ম্যানেজ’ করতে পারেননি এবার। পারার কথাও ছিল না।
চীনের পয়সা ছাড়া শুধু আইএমএফের ঋণ দিয়ে তিনি কতদিন অর্থনীতি সামলাতে পারবেন, তা শুধু সময়ই বলতে পারবে। তবে চীন যে আওয়ামী লীগ সরকারের কাজকর্মে বেশ বিরক্ত এটা দেশটি ভালো করেই জানান দিল।