দিল্লির আদেশ ছাড়া তিনি কিছু করতে পারেন না
আমাদের এখানে র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) ভাই ও বোনরা রয়েছেন, তাদের আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনারা দাদাদের কাছে গিয়ে একটু বলেন, (নরেন্দ্র) মোদির গোলামী আমাদের ‘রানি মা’ করতে পারেন কিন্তু দেশের নাগরিকরা সেটা করে না। এ আলোচনা সভায় যারা উপস্থিত আছেন, আমার থেকে তারা অনেক বেশি জানেন। আমাদের রানি মা নোবেল পুরস্কার পাননি বলে মন খারাপ করেছেন। আমরাও মন খারাপ করেছি। উনি যদি নোবেল পুরস্কার পেতেন তা হলে হয় তো প্রফেসর (ড. মুহাম্মদ) ইউনূসসহ আমরা অনেকে শান্তিতে থাকতাম। কাজেই নোবেল পুরস্কার পাননি, কি আর করা! কিন্তু উনি আরেকটা জিনিস পেয়েছেন, যেটাতে তার খুশি হওয়া উচিত।
ভারতের এ রাজ্যের (বাংলাদেশের) মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ কয়জন পায়! এটা বিরাট পাওয়া। ভারতের ২৮ জন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তারা কিন্তু নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। ‘রানি মা’ তো নির্বাচন করে আসতে হয়নি। সে দিক দিয়ে উনি সুবিধা পেয়েছেন। তবে অসুবিধা এটা আছে ২৮ জন মুখ্যমন্ত্রীরা দিল্লিতে গিয়ে কথাবার্তা বলতে পারেন। আমাদের ‘রানি মা’ সেটি করতে পারেন না।
ভারতের রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের রাজ্য পরিচালনা করতে পারেন, দিল্লী শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সে সুযোগ নেই, মোদির আশীর্বাদ ছাড়া তার রাজ্যের কার্যক্রম চলে না।দিল্লির আদেশ ছাড়া তিনি কিছু করতে পারেন না। ষদিও তিনি মুখ্যমন্ত্রী, অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীর চাইতে পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন।
আমি একটু অন্য জায়গায় থেকে কথা বলতে চাই, আমি গত জুন মাসের ২৯ তারিখ ম্যানিলায়, সেখানে একটা কনফারেন্সে একজন ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেলের সাথে দেখা। জেনারেল বিনোদ কুমার শর্মা, উনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেকেন্ড লেফটেন্যান্টেন ছিলেন। এখন তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল। উনি কথা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা তো বাংলাদেশকে মুক্ত করেছি এবং পাকিস্তানিরা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এখন এটা আমার কাছে খুব আপত্তিকর। সত্যিকার অর্থে যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু আমাদের ‘রানি মা’ প্রকাশ্যে যখন বললেন, পাকিস্তান ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। যারা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের বকা দিয়ে সে একই কথা বললেন। তখন তো জেনারেল শর্মা সেই খুঁটির জোর তো পাবেনই। ধরেন ভারত কী করে সে নিয়ে এই আলোচনা সভায় অনেকে কথা বলেছেন। প্রধান যে বিষয়টি ভাবার কথা, ভারতের ভূমিকা যদি আমরা দেখি, তাদের কাজ হচ্ছে আমাদের উন্নয়ন আটকে রাখা। এ দেশে তাদের বাজার ঠিক রাখা, আমরা যেন আইএসআই এবং চীন সম্পর্কে কোনো কিছু না বলি। ভারতীয় বাহিনীর হাতে বর্ডার হত্যা সম্পর্কে কোনো কিছু না বলি, কাশ্মীর সম্পর্কে কোনো কথা তো বলাই যাবে না। এভাবে আমাদের নিয়ে ‘রানি মা’ আমাদের ওপর তার শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। তা না হলে ওনার গদি নিয়ে টানাটানি হবে। এখন উনি গদি রক্ষা করবেন, না দেশের কথা ভাববেন? এ বিষয়টা আমাদের চিন্তা করতে হবে। আলোচনা সভায় এ সুযোগে র’য়ের দুজন ভাই-বোনকে বলতে চাই, তারা তো এ সভায় রয়েছেন, তাদের আমি মনে করিয়ে দিতে চাই। আপনারা দাদাদের কাছে গিয়ে একটু বলেন মোদির গোলামী আমাদের ‘রানি মা’ করতে পারেন, কিন্তু দেশের নাগরিকরা সেটা করে না। বাংলাদেশের নাগরিকদের মেরুদণ্ড আছে। তার মেরুদণ্ড না থাকতে পারে, আমাদের মেরুদণ্ড আছে।
এবং আমাদের দেশ আমরাই চালাব, আমাদের দেশ আমাদের মতো করে চলবে। এত বছর যেভাবে চলছে, এভাবে চলতে পারে না। এ জন্য আমাদের ভিন্ন জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এ যাওয়াটা আপনি আপনি হবে না। এখানে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে একটু কথা বলি। এ বছর দাদা মোদি সুবিধা করতে পারেননি, তারওপর উনি নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।আমাদের এখানে বছরের পর বছর কোনো নির্বাচন হয় না। এখন সঠিক সংখ্যাটা আমরা জানি না। দেশের তিন কোটির অধিক যুবক-যুবতী এখন পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি, সেই দেশে আমরা থাকি। সেই দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণে আমরা চলি।
আমি আজকে সকালে আদালতে গিয়েছিলাম। কারণ আমার হাজিরা ছিল। হাজিরা যে কারণে ছিল সেটা একটু বলি। ২০১৮ সালে আমি নাগরিকের পক্ষে কথা বলেছিলাম। নাগরিকের পক্ষে কথা বলা আমাদের দেশে অন্যায়। সে জন্য আমাকে যে আইনে ধরা হয়েছিল, আমার ওপর অত্যাচার করা হয়েছিল এবং ১০৭ দিন জেলে ছিলাম। সেগুলো হয়েছিল কী কারণে? আমি নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নাগরিকের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা এখনো অন্যায়, সেটা করা যায় না এ দেশে। এই ভারতীয় জেনারেল বিনোদ কুমার শর্মা যে কথা বলেন, তার বাইরে গিয়ে দুটো দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক হওয়ার কথা ছিল। আমাদের এখানের দুই দেশের সম্পর্কে নিয়ে মন্ত্রীরা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বলেন। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে যদি ডোমেস্টিক ভায়ালেন্স হয়, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবনার ব্যাপার রয়েছে। আমাদের এখানে র’র কথা বলাম, প্রধান যে বিষয়টি নিয়ে ভাবনার বিষয় রয়েছে, একেবারে শুরু থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভারতের যে চুক্তিটা হয়েছিল সেটা গোলামী চুক্তি। সেই গোলামী চুক্তি এখনো আমরা বর্জন করতে পারিনি। সেই গেলামী চুক্তির মধ্যে আমাদের যে বিষয়গুলো পাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো আমরা এখনো পাইনি।
এখানে আমরা যদি ‘রানি মা’র কথাই বলি, উনি দেশের নির্বাচনে নির্বাচিত হননি ঠিকই, কিন্তু উনি থেকে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করেন। দলীয় কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেই আমরা সবাই রাজাকার হয়ে যাই। রাজাকার কারা ছিল? যারা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। আজকে যারা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে, দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে; তারা কি রাজাকার না? একটাই ভিন্নতা আছে, তারা হয়তো যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, তারা কি এখন ডামি রাজাকার নয়? এই ডামি রাজাকারদের আমরা আটকাব। আমি এটা দিয়ে শেষ করি- আবারও র-কে বলছি, আপনারা আমাদের ‘রানি মা’কে নিয়ে ট্রল করতে পারেন, কে সেনাবাহিনীর প্রধান হবেন সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আমাদের মন্ত্রী পর্যায়ে মন্ত্রণালয়ে কে মন্ত্রী হবেন সে সিদ্ধান্ত আপনারা নিতে পারেন; কিন্তু দেশের মানুষের ওপর আপনাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আপনাদের রোধ করবে।তাদের কথায় চলবে দেশ।
আমি শুধু দুটা কথা বলে রাখি, আগের কথাগুলো র-কে বললাম। তার আগে একটা গল্প বলি, আমি তো আলোকচিত্রী। একটা ছবি অনেক আগেই দেখেছেন আপনারা কিশোর মালেকের তোলা একজন মিলিটারি জওয়ান একজন পুরুষের লুংগি খুলে উঁকি মেরে দেখছেন। এই ছবিটা (নিয়ে) ভিন্ন মত ছিল, পাকিস্তানি মিলিটারি মুসলমান জওয়ান হিন্দু না মুসলমান সেটা দেখছে। এ ব্যাখ্যা ধোপে টিকে না। শুধু তাই না, পাকিস্তানি জওয়ান ভারতীয় জওয়ানের মধ্যে পোশাকে ভিন্নতা রয়েছে। যদি তখন সেই এলাকা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকত, তখন ভারতীয় আলোকচিত্রীর খবর হয়ে যেত। ছবিতে সেটা ভারতীয় জওয়ান ছিল। পাবলিক লুংগির ভিতরে অস্ত্র লুকিয়ে নিয়ে যায় কি না তা রোধ করতে এই চেক করছিল। তখন ১৯৭১ সালের পর ভারতীয় জওয়ানদের সেই ক্ষমতা ছিল। ১৯৭১ পরে ৫৩ বছর পর র এবং ভারতীয় জওয়ানদের একই ক্ষমতা থাকবে সেটা হতে পারে না। আমাদের দেশে ‘র’ এখনো নজরদারি করবে, সেটার কোন জায়গা এখন থাকতে পারে না। সেটাকে আমাদের প্রতিরোধ করতেই হবে। সেই জন্য বলি, আমরা যারা আছি দেশে একটু খেয়াল করে লুঙ্গি সাবধান।