শেখ হাসিনার কি ধারণা বাংলাদেশের মেয়েরা পড়াশোনায় খারাপ!
আজ (রবিবার) কোটার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিসিএসে কোটা সংরক্ষণ তুলে দিলে মেয়ারা চান্স পাবে না। বাস্তবতার সঙ্গে এ কথার মিল নেই। বাংলাদেশে গত এক দশকের মাধ্যমিক এবং উচ্চমধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মেয়েদের রেজাল্ট ছেলে ছাত্রদের থেকে বরং ভালো। শুধু ভালো না, অস্বাভাবিক রকম ভালো।
শুধু তা না। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং ভালোও করছে তারা। মজার বিষয় হলো, নারীমুক্তি নিয়ে শেখ হাসিনা প্রায়ই কথা বলেন। কিন্তু ওনার শাসনামলে নারী তো দূরের কথা পুরুষরাও ভোট দিতে পারেন না। দেশের মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা উনি নিজেই। তাহলে এরকম একটা কথা শেখ হাসিনা বললেন কেন?
ওনার মনের অন্দরমহলে আমাদের যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের জনপ্রিয়তা আর দাবানলের মতো এর ছড়িয়ে পড়া সরকারের জন্য আতংকের, এটা কোনো সন্দেহ ছাড়া বলা যায়। কোটা প্রতিরোধকারীদের একটা বড় অংশই নারী, কারণ তারা জানেন সমান সুযোগ পেলে বিসিএস পরীক্ষায় পুরুষদের মতো বা তাদের চেয়েও ভালো করবেন।
এ সত্যের আলোকে যদি আমরা শেখ হাসিনার বক্তব্য দেখি, তাহলে আমরা পাই একজন সরকারপ্রধানকে যিনি প্রাণপণে চেষ্টা করছেন কোটা আন্দোলনে নারী-পুরুষ বিভাজন ইস্যু তৈরি করে এটাকে মেরে ফেলতে।
নারীরা দুর্বল, নারী সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না— এসব কথাবার্তা আমরা আশির দশকে শুনতাম। এসব আলাপ-সালাপ আসত সমাজের প্রতিক্রিয়াশীল একটা অংশের কাছ থেকে। এর উদ্দেশ্য ছিল দুর্বল ট্যাগ দিয়ে নারীকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাত থেকে দূরে রাখা।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় এসে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। তার ধারাবাহিকতায় নারীশিক্ষায় বাংলাদেশ একটা রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আইসিডিডিআরবি থেকে শুরু করে পশুসম্পদ গবেষণায় বাংলাদেশের নারীরা পুরস্কার পেয়েছেন বিদেশ থেকে। গবেষণা করে নাম কামিয়েছেন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিসিএসে কোটা সংরক্ষণ তুলে দিলে বিসিএসে মেয়ারা চান্স পাবে না— শেখ হাসিনার ই বক্তব্য নারীর জন্য অবমাননাকর একটা উক্তি। নারী স্বাধীনতা, নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির মতো বিষয়গুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়।