বাংলাদেশ যেন তিয়েনআনমেন চত্ত্বর, আবু সাঈদ যেন একজন ট্যাংকম্যান

১৯৮৯ সালের এপ্রিল-জুন মাসে চীনের রাজধানী বেইজিং এ এক নজিরবিহীন গণ আন্দোলন চলে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংষ্কারের দাবিতে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলা ওই আন্দোলনে অংশ নেন লাখ লাখ মানুষ। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় চীনের ছাত্ররা। মে মাসের মাঝামাঝি তারা চীনের বিখ্যাত তিয়েনআনমেন স্কয়ারে সমবেত হন। শুরু করেন অনশণ। লাখ লাখ মানুষের সেই আন্দোলন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয় চীনের কর্তৃত্ববাদী সরকার। ১৯৮৯ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে শত শত ট্যাংক নামানো হয় রাস্তায়। বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্র তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ট্যাংকগুলো ঢোকার পথে ট্যাংকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ান একজন। দু’দিকে দু’হাত দিয়ে তিনি এমনভাবে দাঁড়ান যেন তিনি ট্যাংক থামানোর চেষ্টা করছেন। এরপর দু’জন ব্যক্তি তাকে সরিয়ে নিয়ে যায়, ওই ব্যক্তির সন্ধান আর কোনদিন মেলেনি, জানা যায়নি তার পরিচয়ও। তবে দ্রুতই তার নাম মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে ‘ট্যাংকম্যান’ হিসেবে।

বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা সরকার যে বর্বর কৌশল নিয়েছে তা মানুষকে বেদনার্ত করেছে। নির্মমভাবে পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে, আর ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তো একেবারে রণমূর্তি ধারণ করেছে। গত কয়েক বছর ধরে বিরোধীদলসহ দেশে যে কোন আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ছাত্রলীগ। হেলমেট আর লাঠি নিয়ে বিরোধীদের দমনে ছাত্রলীগের যে অসামান্য পারঙ্গমতা সে জন্য এই বাহিনীটির নামই হয়ে গেছে হেলমেট বাহিনী।

ছাত্রদের কোটা সংষ্কার আন্দোলন দমনে দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মারমুখী অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। পুলিশ বাহিনীও ছিল বেপরোয়া। রংপুরে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ। টেলিভিশনে সে সময়ের বিক্ষোভের দৃশ্য দেখানো হচ্ছিলো, এরই মাঝে ঘটে আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ার ঘটনাটি। পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করলে তিনি দু’হাত ছড়িয়ে দাড়ান। কিছুটা এগিয়ে আসেন। অমন একটা মূহুর্তে কেউ কাউকে লক্ষ্য করে গুলি করতে বা রাবার বুলেট ছুড়তে পারে এটা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি। কিন্তু অকল্পনীয় ঘটনাই ঘটিয়ে ফেললো পুলিশ। নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন আবু সাঈদ। সাহসী আবু সাঈদ যেন চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের সেই সাহসী মানুষটি, যার নামই হয়ে গেছে ট্যাংকম্যান।

জনগণের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ যদি একটি বাহিনীর থাকে তারা কি করে একজন বিক্ষোভকারীকে লক্ষ্য করে অমনভাবে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে? কোটা সংষ্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। মানুষের ভালবাসায় তারা থাকবেন, তবে তাদের মধ্যে একটু আলাদাভাবেই বিবেচিত হবেন বাংলার দুর্দান্ত সাহসী যুবক আবু সাঈদ।