নিরাপদ সড়ক থেকে কোটা বিদ্রোহ— আমাদের মুক্তির নতুন দিগন্ত
বর্তমানে চলা কোটাবিরোধী আন্দোলনের পিছনে আছে প্রতিরোধের এক ধারাবাহিক ইতিহাস। এ আন্দোলেন যুক্ত অনেকেই জড়িত ছিলেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাথে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত ও ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এর পরপর কলেজটির শিক্ষার্থীর মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নামে পরিচিত এ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণ-তরুণীরাও। ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন মাস্তান-বাহিনীর হাতে পিছু হটলেও যে কিশোর ২০১৮ সালে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো সে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বিদ্রোহের আগুনের যে ফুল্কি ২০১৮-এর কচি মনে জ্বলেছিল তা আজ লেলিহান শিখা হয়ে বিরাজ করছে এসব তরুণ-তরুণীর বুকে। গতকাল আমরা দেখেছি নটরডেম কলেজ-সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শামিল হয়েছেন— আরেকটি প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে অন্যায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নামার জন্য।
এ প্রসঙ্গে একটি কথা বললেই নয়। বাংলাদেশের বিরেধীদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব বারবার জনগণের হৃদয়ের স্পন্দন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন বেশ সাফল্যের সাথে। গত দশকে জনগণ সংগঠিত হয়েছে একা এবং নেতৃত্ববিহীন। এভাবে বারবার পিছিয়ে পড়া, মানুষের মন বুঝতে না পারার ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা।
আন্দোলন-সংগ্রাম নতুন নেতৃত্ব তৈরী করে, ইতিহাসের বাঁক বদলে দেয়। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা আজ যে আন্দোলন করছেন তার মশাল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হাতবদল হবে। বুড়ো-জীর্ণ নেতৃত্বকে পিছে ফেলে আমাদের প্রতিরোধের মিছিল গিয়ে ছুটবে মুক্তির নতুন দিগন্তের দিকে।