বিজয়কে কালিমালিপ্ত করা নয়, উপভোগ করুন
রক্তক্ষয়ী এক আন্দোলনের মাধ্যম পতন ঘটলো আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। যাওয়ার আগে তিনি পদত্যাগ করেছেন, তবে জাতির উদ্দেশে শেষ ভাষণ দেয়ার খায়েশ থাকলেও তা পূরণ হয়নি। শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বলেছিলেন, শ্রীলংকার কায়দায় তার সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকারের পতনটা তেমনই হয়েছে। তিনি পালিয়ে বেঁচেছেন। তবে যাওয়ার আগে তিনি দেশে এক রক্তক্ষয়ী লড়াই লাগিয়ে গেছেন।
পুলিশকে তিনি ব্যবহার করেছেন যথেচ্ছভাবে। সেনাবাহিনীকেও রাস্তায় নামিয়েছিলেন কিন্তু সেনাবাহিনী জনতার বিরুদ্ধে যেতে চায়নি। তারপরও যথাচরিত শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন এ যাত্রায় তিনি হয়তো পার পেয়ে যাবেন, কিন্তু তা আর হয়নি। তিনি পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন কিন্তু বিপাকে ফেলে গেছেন দেশটাকে। তার আমলের তথাকথিত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সারাদেশে রাম রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। দেশের প্রতিটি জনপদ ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভয়ে ভীত। বিএনপি বা বিরোধীদল তো বটেই একেবারে সাধারণ মানুষও রেহাই পায়নি আওয়ামী অত্যাচার থেকে। তাই শেখ হাসিনার পলায়নের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা শুরু হয়। ঘটেছে অনেক প্রাণহানিও, এসব ঘটনা নি:সন্দেহে দু:খজনক, তবে ১৭ বছর ধরে নানাভাবে লাঞ্ছিত মানুষ কিছুটা হলেও প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবে এটা সবাই ভেবেছে। কিন্তু বিজয় ধরে রাখতে হলে রক্ত ঝড়ানো যাবে না, কোন মানুষকেই ক্ষতির শিকর হতে দেয়া যাবে না। যে হিংসার বীজ মানুষের মনে বপন করেছে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা তা থেকে বের হয়ে আসতে সময় লাগবে, কিন্তু তাই বলে এমন কিছু করা ঠিক হবে না যা দেশ ও সমাজে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক ছাপ বা প্রভাব ফেলে। তাই সবারই উচিত সংযমী হওয়া। গণভবনে যা হয়েছে তাকে তাৎক্ষণিক বিষয় বলে অনেকেই মনে করেন, কিন্তু প্রতিশোধষ্পৃহা থেকে কিছু করা আমাদের আর্ও বড় ক্ষতির দিকে ঠেলে দেবে। তাই সবাইকে সাবধান থাকতে হবে, সংযত হতে হবে।
দেশে সহিংসতার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের জানমাল, লুটতরাজ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধে সেনাবাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, পাশাপাশি দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পরবর্তী পরিস্থিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় তারেক রহমান বলেন, বিজয়ের এই আনন্দঘন সময় শান্তভাবে উদযাপন করুন। অনুগ্রহপূর্বক কেউ প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসা পরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে দয়া করে আইন তুলে নেবেন না।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া-ও দেশের সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনগণকে শান্ত ও ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতেও সবার প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানও একই ধরণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। জনগণের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পা্ওয়া যাবে না, সংঘাত থেকে বিরত থাকুন। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়তে হবে।
শেখ হাসিনার পতন ও পলায়ন বাংলাদেশের ছাত্র জনতার এক বড় বিজয়। এই বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানামহল চেষ্টা চালাচ্ছে, তাই মানুষকে সাবধান থাকতে হবে। অনেক রক্তের বিনিময়ে যে বিশাল অর্জণ পেয়েছে দেশের মানুষ তা যেন কালিমালিপ্ত না হয়।