সত্যিই তিনি নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখালেন

গতকাল রবিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ শুনছিলাম। এতে মনোযোগ ছিল গোটা দেশের আপামর জনতার। আমি নিজেও অনেক অনেক বছর পর এই প্রথম খুব মনোযোগের সঙ্গে পুরো সময়জুড়ে আমাদের কোনো সরকারপ্রধানের ভাষণ শুনলাম। যেহেতু ব্যক্তিটি একজন পৃথিবী বিখ্যাত মানুষ, যার প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়; তাই এত মনোযোগ। জাতির উদেশে প্রদত্ত এই ভাষণে কোনো রাগ, ক্ষোভ, শ্লেষ, শ্লাঘা, ঘৃণা, বিদ্বেষ কিছুই ছিল না। ছিল না কোনো নোংরা ভাষা। কিংবা পলাতক প্রতিপক্ষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কোনো রূঢ় শব্দ।

অথচ, শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছর ধরে ড. ইউনূসকে কতভাবেই না তাচ্ছিল্য করেছেন। পদ্মা সেতু থেকে ফেলে চুবাতে চেয়েছেন দুইবার। কিন্তু আজ সেই ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার আসনে বসে একটা কটু কথাও বললেন না শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। তিনি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখার কথা বলে গেলেন। মূলত, রাজনৈতিক দলগুলো যে রোডম্যাপের কথা বলছিল, তিনি শুধু সেটাই অতি সাধারণ ভাষায় অথচ অসাধারণ বুৎপত্তির সঙ্গে উপস্থাপন করে গেছেন। তার ভাষন শুনে মনে হলো একজন পরিপূর্ণ সভ্য ও আধুনিক মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলছি।

বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা যে, ঔদ্ধত্য ভঙ্গিমায় ঘৃণা ও বিদ্বেষমাখা বাগাড়ম্বরপূর্ণ ভাষণ শুনে আসছিলাম তার বিপরীতে এ ভাষণ ছিল বুদ্ধিদীপ্ত, সৃজনশীল এবং একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বিনীত অঙ্গীকার।

ড. ইউনূস হয়তো বহু বছর ধরে বহু দেশের পার্লামেন্টে কিংবা বিশ্বের নামি-দামি নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিয়ে বিদগ্ধ মানুষজনকে মুগ্ধ করেছেন, কিন্তু বাংলাদেশের আমজনতা একসঙ্গে বসে এই প্রথম তার ভাষন শুনে সত্যিই এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে।

তিনি তার ভাষণে জমিদারি স্টাইলের নিপীড়নমূলক শাসন থেকে কীভাবে একটি আধুনিক রাষ্ট্র নির্মাণে পদক্ষেপগুলো নেওয়া যায় তার একটা রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন দুর্নীতির মূলোৎপাটনের কথা। অঙ্গীকার করেছেন বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার। তিনি তার নাতিদীর্ঘ ভাষণে অতীত সরকারের সমালোচনা করে সময় নষ্ট করেননি, যা আমরা গত ১৫ বছর ধরে শুনে আসছি। শুধু তিনি বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। আসলে তিনি ইতিবাচক কাজ দিয়ে অতীত সরকারের অপকীর্তির জবাব দিতে চেয়েছেন। যারা সেটা পারে না তারাই শুধু অতীত সরকারের কাধে দোষ চাপিয় পার পেতে চায়। যেটা আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর ধরে অতীতের বিএনপি সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে ব্যর্থতা ঢাকতে চেষ্টা করেছে।

আমি সাধুবাদ জানাই ড. ইউনূসকে, যার ওপর আস্থা রাখা যায়, যাকে বিশ্বাস করে ঠকার সম্ভাবনা নেই। তবে ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারের অনেক কথা থাকলেও বর্তমান সংবিধান সম্পর্কে  কিছু বলেননি তিনি। অথচ, ফ্যাসিবাদ সৃষ্টির অনেক উপাদান রয়েছে এই সংবিধানের মধ্যে। আশা করি, আগামীতে এই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে সামনে চলে আসবে। আমি ড. ইউনূসের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।