আলোর পথে বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

দুঃসহ এক মর্মবেদনার স্মৃতি পেছনে ফেলে পার হয়ে গেল আগস্ট বিপ্লবের এক মাস। এখনো রাস্তায় রক্তের দাগ শুকায়নি। এখনো আহতরা হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কতজনের চোখ গেল তারও কোনো হিসাব নেই। এখনো আমরা জানি না নিখোঁজের তালিকা কত বড়। তাদের পিতামাতা, নিকটজনেরা কতটা কষ্ট নিয়ে তাদের খুঁজছে, তার খবরও আমরা কতটুকু রাখি!

তবুও এত দুঃখ-বেদনার মাঝেও ৫ আগস্টের ছাত্র জনতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বয়ে সৃষ্ট এই বিপ্লব আমাদের ইতিহাসে এক গৌরবজনক অধ্যায় রচিত করেছে। '৭১-এর রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫৩ বছর পর এরকম একটি বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে থাকা সত্যিই এক গৌরবের বিষয়।

ফরাসী বিপ্লব কিংবা রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব অথবা চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের কথা আমরা শুনেছি কিংবা বই পুস্তকে পড়েছি। যৌবনে মার্কিন লেখক জন রিডের ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন' পড়ে কমিউনিস্ট বিপ্লবী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল প্রবলভাবে। শুধু আমি নই, ষাট ও সত্তুর দশক জুড়ে পৃথিবীর নানা দেশের নানা প্রান্তের তরুণেরা জন রিড দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন।

এ সব ইতিহাস। আমরা পড়ে পড়ে জেনেছি, চোখে দেখিনি। কিন্তু সেই আমাদের চোখের সামনে ঘটে গেল আগস্ট বিপ্লব। এরকম একটা বিপ্লবের সাথে থাকাও সৌভাগ্যের বিষয়। এই বিপ্লবকে আমরা আখ্যায়িত করতে পারি ‘দুনিয়া কাঁপানো বিশদিন' হিসেবে।

ফরাসী বিপ্লব যেমন  ইউরোপজুড়ে  সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার  করেছিল। যার মাধ্যমে শুধু  ফ্রান্সে নয়, গোটা ইউরোপে  রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের ধ্বংস স্তূপের উপর প্রজাতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল। একইভাবে রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব সারা বিশ্বের তরুণদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। সেই পথ ধরে চীনের সফল কমিউনিস্ট বিপ্লবও তরুণদের বেশি বেশি বিপ্লবী করে তুলছিল। বাংলাদেশে সংঘটিত আগস্ট বিপ্লব একইভাবে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তরের স্বাধীনতা, সাম্য, মৈত্রীর আকাঙ্ক্ষিত  ছাত্র-জনতার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে।

ফরাসী বিপ্লব যেমন রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিল; আমাদের আগস্ট বিপ্লব ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। সেখানে যেমন বাস্তিল দুর্গের পতন হয়েছিল; এখনে তেমন পতন হয়েছে আয়না ঘরের। আজ বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষেরা ফ্যাসিষ্টদের বলছে, তোমাদেরও পতন হবে শেখ হাসিনার মত। এই তো দু'দিন আগে নেপালের বিরোধী দল সে দেশের প্রধান মন্ত্রী কেপি শর্মা অলির দিকে আঙুল তুলে শেখ হাসিনা’র পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

এই বিপ্লব কেবল ফ্যাসিবাদের পতন ঘটায়নি, এই বিপ্লব বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে    স্বাধীনতা  সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি করেছে।  হতাশাগ্রস্ত মানুষের মধ্যে 'আমরাও পারি' এ রকম একটি জাগরণের পটভূমি তৈরী করেছে। এই বিপ্লবে ক্ষমতার মসনদে এমন একজন  ব্যক্তিত্বের অভিষেক হয়েছে, যিনি সারা বিশ্বে সম্মানিত ও নন্দিত।

সীমাহীন দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতম শাসনের ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যখন তলানিতে; তখন এ রকম একজন ক্লিন ইমেজের আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব পাওয়া আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপারই বটে। আর সেই ব্যক্তিটি হচ্ছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ দেশের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে আলোর পথে এগিয়ে যাবে।