আসাদ উত্তর সিরিয়ার সামনের দিনগুলো কেমন হতে যাচ্ছে

সিরিয়ার শরনার্থীরা বিভিন্ন দেশ থেকে স্বদেশে ফিরতে শুরু করেছে সম্ভবত আরেকটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে। কারণ যুদ্ধে বিজয়ী গোষ্ঠীগুলো নানাভাবে বিভক্ত। আবার এদের পেছনে রয়েছে বড় বড় এক্টর। তাদের স্বার্থও ভিন্ন ভিন্ন। অভিসন্ধিও আলাদা আলাদা। বাশার আল আসাদের পতন হলেও তার মদদদাতা পরাশক্তি হিসাবে পরিচিত রাশিয়ার সামরিক ঘাটি ও নৌবহর ওখানে এখনো আছে। আরেক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাটি রয়েছে কুর্দি এলাকায়। আবার কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকরী তুরস্কের সামরিক উপস্থিতও সেখানে বিরাজমান আছে।

এ ছাড়া সৌদি আরব, মিসর এবং অন্যান্য আরব দেশের সমর্থিত গোষ্ঠী আছে। তবে এর সব কিছু ছাপিয়ে বিপর্যয়কারী শক্তি হিসাবে ইসরাইলের আগ্রাসন পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রও বিমান আক্রমণ শুরু করছে।

এরকম একটি পটভূমিতে বিপ্লবীরা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার উপহার না দিতে পারে; তাহলে শরনার্থীরা নিজ দেশেই জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। যদিও ইতিমধ্যে বিজয়ী ফ্যাকশনগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

কিন্তু এরইমধ্যে  ইসরাইলি বাহিনীর সিরিয়ার ‘বাফার জোন' স্বীকৃত  গোলান মালভূমি দখল করে নেওয়া ও ক্রমাগত সিরিয়ার কৌশলগত অবস্থানে বিমান হামলা এবং কোনো কোনো ইসরাইলি মন্ত্রীর দামেস্ক দখলের হুমকির মুখে নতুন সরকার কতটা স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পাওয়া গেছে যে, ইসরাইলি ট্যাংক সিরিয়া সীমান্ত পার হয়ে দামেস্কের দিকে ধাবিত হচ্ছে। হতে পারে ইসরাইল সিরিয়ার বিরাট একটা অংশ দখল করে গাজা যুদ্ধে বড় ধরনের সুবিধা নিতে চাচ্ছে। অর্থাৎ ইসরাইল পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ গ্রহন করছে।

এদিকে ফ্যাকশনগুলোর মধ্যে প্রধান শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হায়াত তাহারীর আল-সাম (এসটিএস) এর পূর্বের আইএস ও আল-কায়দা সম্পৃক্ততা থাকার কারণে সংগঠনটি এখনো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে। এমনকি এসটি এস-এর নেতা আবু মুহাম্মদ জোলানীর মাথার দাম ঘোষিত হয়েছিল এক কোটি ডলার। ফলে বিপ্লবী সরকারের পক্ষে সহজে পশ্চিমা স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন হবে।

সে কারণেই শরনার্থী পুনর্বাসন ও বিধ্বস্ত অর্থনীতি ঠিক করতে পশ্চিমা সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে আমেরিকা ইসরাইলের মাধ্যমে একটা পথ তৈরীর চেষ্টা করতে পারে। অপরদিকে রাশিয়ার সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের কারণে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনাও  ক্ষীন। এই অবস্থায় সিরিয়ার এই নতুন সরকার দেশ পুনর্গঠনে কতটা সফল হতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

অন্যদিকে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠবে যখন বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যকার স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। ফলে আরেকটি রক্তাক্ত সংঘাতের সূচনা যে হবে না, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। যেমনটা লিবিয়াতে আমরা লক্ষ্য করেছি।

তবে সর্বশেষ খবর দেখে মনে হচ্ছে, ইসরাইল সিরিয়ার আরো অঞ্চল দখল করে হামাস ও হিজবুল্লার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী সকল রুট বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, দামেস্কে সরকার গঠনের আগেই ইসরাইল তার সামরিক কৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করতে চাচ্ছে। এতে আরকটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, যা আরো বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করবে।

সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের এই নগ্ন চেষ্টা ইরান ও তুরস্ক মেনে নাও নিতে পারে। এমনকি এতে মিসর ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি বাতিল করে দিলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। যা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরো একটি বড় যুদ্ধের পটভূমিই রচনা করবে।