আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের ‘স্বাধীন অস্তিত্ব’ থাকবে না: ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের ‘স্বাধীন অস্তিত্ব’ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার দুপুরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ওপরে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেনে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে আমাদের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য এই যে সরকার… আমি আগেই বলেছি এরা সরকার নয়, এরা বর্গী, ডাকাত, লুটেরা। এদেরকে যদি আমরা প্রতিরোধ করতে না পারি, ঠেকাতে না পারি আমাদের দেশের অস্তিত্ব থাকবে না।”
তিনি বলেন, ‘‘আমার সমস্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি বলছি…. আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারব না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং আমরা দেশকে মুক্ত করার জন্য কাজ করি।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।
জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্ম তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমানের প্রত্যেকটি কাজ দূরদৃষ্টি সস্পন্ন। ফারাক্কা, ভারতের সাথে সম্পর্ক, ইউরোপের সঙ্গে সস্পর্ক, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিটা জিনিসের সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গি আছে। মেয়েদেরকে কি করে উপরে তুলবেন, শিশুদের কি করে মানুষ হিসেবে তৈরি করবেন, ছাত্রদের কি করে সঠিক পথে নিয়ে যাবেন সেই কাজগুলো জিয়াউর রহমান করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানকে শুধু শ্লোগানের ভাষা দিয়ে জানলে সঠিকভাবে বিচার করা হবে না। তাকে বুঝতে হলে তাকে জানতে হলে তার কাজের কর্মের গভীরে যেতে হবে। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি… এই একটা কথার মধ্য দিয়ে তিনি সৈনিক…. মুহূর্তের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে গেলেন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নেতা তিনি একটা জাতির জন্ম ঘোষণা দিয়ে দিলেন। এটাই চিরন্তন সত্য যে, এই জাতি যতদিন থাকবে, আমরা যতদিন থাকবো জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা ততদিন থাকবে… এটা কোনো বির্তকের বিষয় না, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য-ইউনির্ভাসেল ট্রুথ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘কী ভয়াবহ চিন্তা করেন… পত্রিকা খুললে শুধু লুট আর লুট ছাড়া কিচ্ছুই পাবেন না। অদ্ভুত! কারা লুট করছে? যারা আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রের বড় দায়িত্বে তারা…। আর্মির সাবেক প্রধান…ইমাজিং, যারা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রধান আইজি তাদেরটা বেরিয়ে আসছে। সংসদ সদস্য চোরাচালানের সাথে জড়িত… টুকরা টুকরা হয়ে যায়। মাদকপাচারকারীও সংসদ সদস্য ছিলো কক্সবাজারের টেকনাফে… এই কোন সমাজ বলেন আপনারা।”
তিনি বলেন, ‘‘এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়ে যায়। সোনা হারিয়ে যায়, ডলার রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, ওদিকে ইন্টারন্যাশনাল হ্যাকিং হচ্ছে মিলিয়স এন্ড মিলিয়ন ডলার নিয়ে চলে যাচ্ছে… কল্পনা কল্পনা করা যায়। শেয়ারবাজারে রথি-মহারথিরা লুটপাট করে শেষ করে দিচ্ছে… সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব (আবুল মাল মুহিত) বলেছেন, আমার কিছু করার নাই ওদের হাত অনেক লম্বা। বাংলাদেশে এখন অনেক বড় বড় মানুষ, এতো বড় বড় যে তাদের আশে-পাশে যাওয়া যায় না। কেউ দরবেশ, কেউ সন্ন্যাসী, কেউ বিরাট ধর্মীয় আলেম এসব লোকেরা এসব কাজগুলোর।”
তিনি বলেন, ‘‘পত্রিকায় আসছে চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকের শাখা থেকে ১৪৯ ভরি সোনা লোপাটের ঘটনা। এখন থেকে ১৪৯ ভরি সোনা তো কিছুই না ভাই… ব্যাংক থেকে তো টনকে টন সোনা চলে যাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোনো দিকে কোনো চিন্তা নাই জবাবদিহিতা নাই, চিন্তা নাই, কিচ্ছু নাই। একটাই চিন্তা ছিলো, আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে রাখতে হবে…কেউ নাড়াতে পারবে না। তার জন্য আমি আমার চতুর্দিকে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়ে আমার সমস্ত রক্ষী তৈরি করেছি...একেকটা রক্ষী।”
‘‘আপনি যদি এ্ইসব সমস্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কথা শুনেন, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখেন এরা আমাদের প্রভু। ওই এক প্রভু আজকে কোথায় গেছে? এমনভাবে কথা বলতো… পিস্তল দেখিয়ে বলতো এটা তোমাকে এমনি দেয়া হয় নাই, এটা ব্যবহার করার জন্য দেয়া হয়েছে। করেছেনও ব্যবহার… মানুষকে মেরেছে, গুম করে রেখে… এখন আপনি (বেনজীর আহমেদ) কোথায়? তার (বেনজীর আহমেদ) সম্পর্কে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান বলছেন, আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানে না।তাহলে রাষ্ট্র কিছুই জানে না। তাহলে এটা রাষ্ট্র আছে এখন।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেখেন ঋণ নিয়ে নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে পুরোপুরি ঋণগ্রস্ত করে ফেলেছে… সেই অবস্থা করে দিয়েছে। এমন অবস্থা হচ্ছে যে, ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আমাদের এনজিওগুলোতে ব্যাপার আছে না… অভিযোগ আছে যে, মেয়েরা যখন পারছে না একটা এনজিও থেকে আরেকটা ঋণ নেয়, একটা শোধ করে দিয়ে ওরটা শোধ করে।”
‘‘এদের যুক্তি হচ্ছে, ২০ বছর ধরে আমরা এটা করব… তারপরে আমরা নাই… যা হবার তাই হবে। কত দায়িত্বহীনতা চিন্তা করেন একটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঋণের ওপর দিয়ে রেখে যেতে চায়। এখনই ইতিমধ্যে সেই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাথাপিছু এক লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা।”
রুপপুরসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পগুলোও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে করে দেশকে ঋণনির্ভর করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে করতে আমরা শেষ হয়ে যাবো।”
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক শামসুল আলম লিটন ও ডা. আবু নাছের বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া প্রবীণ চিকিৎসক আবদুল হক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজীসহ পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।