ভোটের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলনের বিকল্প নেই: ফখরুল
ভারতে ভোটের অধিকার আছে বলেই লোকসভা নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে ওলামা দলের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে যে দানব গত ১৫ বছর ধরে আমাদের ঘরের মধ্যে, বুকের মধ্যে চেপে বসে আছে, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে একে সরাতে না পারলে কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা থাকবে না, আমাদের সার্বভৌমত্ব থাকবে না। আমাদের ভোটের অধিকার নেই, আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দেখেন, ভারতবর্ষে ভোটের অধিকার আছে বলেই কিন্তু তারা অন্তত এই যে মোদির (নরেন্দ্র মোদি) তিনবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যে ক্ষমতায় যাওয়ার যে ইচ্ছা-ভাবনা সেইটাকে কিন্তু তারা (জনগণ) রোধ করে দিয়েছে। আজকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পাচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোটের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। ভোটাধিকারের সেই অবস্থাটা আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষজন ভোট দিয়ে যাতে তার নিজস্ব পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আমরা যেন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি সেজন্য আমাদের সংগ্রাম-লড়াই করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব যিনি নির্বাসিত আছেন মিথ্যা মামলায়, তাকে ফিরিয়ে আনার লড়াই করতে হবে। সর্বাপরি দেশের মানুষকে মুক্ত করবার জন্য আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে। এই সংগ্রাম-লড়াই আমার জন্য নয়, এখানে যারা মঞ্চে বসে আছেন তাদের জন্য নয়, এই সংগ্রাম দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘সংগ্রামের ডাকে সকলে সাড়া দিয়ে দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে, আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানি না। সেটা হচ্ছে যে, প্রাইমারি স্কুলের যে টেক্সট বই সেখানে এমন সব কারিকুলাম আনছে যা আমাদের কালচারের বিরুদ্ধে, আমাদের কৃষ্টির বিরুদ্ধে, আমার ধর্মের বিরুদ্ধে। ধর্মহীন একটা রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছেন যে, সাদা চামড়ার লোকেরা নাকি তাকে বলেছে যে, এখানে কোনো একটা দেশের এয়ারবেইস বানাতে। অর্থাৎ সেখানে তাদের জঙ্গি বিমান নামাবে। এয়ার বেইস হিসেবে তারা ব্যবহার করবে। আর বাংলাদেশের একটা অংশ চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের একটা অংশ নিয়ে নতুন একটা খৃষ্টান রাষ্ট্র তৈরি করবার তারা চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে এই মুহূর্তে জনগণের কাছে তার প্রকৃত ব্যাখ্যা তুলে ধরা। কারা চাইছে এবং কেন চাইছে? কেন তা এতোদিন পরে প্রকাশ করছেন এটা আমরা জানতে চাই। কারণ এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। আপনাদের হাতে স্বাধীনতা আর কোনভাবেই নিরাপদ না।’
এ সময় ভারতের সাথে বাংলাদেশের অভিন্ন ১৫৪ নদীর হিস্যা, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে শেখ হাসিনার সরকারের ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মাওলানা মোহা. কাজী আবুল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম জামাল, আবদুল বারী ড্যানি, মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হকসহ ওলামা দলের নেতৃবৃন্দ।