ঘুষ-দুর্নীতিকে উৎসাহিত করার সংবিধানবিরোধী বাজেট: নুর

গণবিক্ষোভে বক্তব্য দিচ্ছেন নুরুল হক নুর

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, দুর্নীতি রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে নির্বাচন, ভোট, গণতন্ত্র না থাকায় জবাবদিহিতাহীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সরকারের জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতি এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, বলতে গেলে দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ বের করতেও ঘুষ দিতে হয়। সরকারি এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি নেই। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে আজিজ-বেনজীরদের তৈরি করেছে। এখন তাদের দায় নিতে চাচ্ছে না। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আজিজ-বেনজীররা তাদের লোক না। অথচ আজিজ-বেনজীরদের তারাই প্রমোশন দিতে দিতে সেনাপ্রধান, পুলিশপ্রধান বানিয়েছে।

শুক্রবার বিকেল চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণবিক্ষোভের আয়োজন করে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখা। সেখানে এসব কথা বলেন নুর।

প্রেসক্লাবের সামনে বক্তব্য শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, বিএনপির দলীয় কার্যালয়, নাইটিংগেল মোড় ঘুরে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির মোড়ে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।

নুরুল হক নুর আরও বলেন, এই যে বাজেট দিয়েছে সেখানে বৈধ আয়ে কর দিতে হবে ৩০%। আর লুটপাট, ব্যাংক ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয়ে দিতে হবে ১৫%। এভাবে সরকার লুটেরাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এই বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য নয়, এ বাজেট আজিজ, বেনজীর, সালমান এফ রহমান, এস আলমের মতো লুটেরাদের জন্য। সংবিধানের ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে- অনুপার্জিত আয় কোনো ব্যক্তি ভোগ করতে পারবে না। তাহলে এক কথায় এই বাজেট ঘুষ, দুর্নীতিকে উৎসাহিত করার সংবিধানবিরোধী বাজেট।

তিনি বলেন, ৫২ ,৬৯ ,৭১ এমনকি দেশ স্বাধীনের পর ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন; ইতিহাসের সমস্ত আন্দোলন-সংগ্রাম তরুণদের কারণে জয়ী হয়েছে। আজকের এই দুর্নীতিবাজ, লুটেরা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবকদের জেগে উঠতে হবে। ছাত্র-যুবক-তরুণরা জেগে না উঠলে এই ফ্যাসিস্ট শাসনের পরিবর্তন হবে না। তাই ছাত্র এবং যুব অধিকার পরিষদকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারা দেশে জনগণকে সংগঠিত করতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, আজিজ-বেনজীর এই সরকারের সৃষ্টি। এই কুখ্যাত বেনজীর হেফাজতের ওপর শাপলা চত্বরে বর্বরতা চালিয়েছে, আলেম-ওলামাদের রক্তাক্ত করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে বালুভর্তি ট্রাক রেখে তাকে অবরুদ্ধ করেছিল। সে হাজারো মানুষকে নির্যাতন, রক্তাক্ত, গুম করেছে। অথচ আজকে কোথায় কুখ্যাত বেনজীর? দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ক্ষমতা হারালে আওয়ামী লীগের লুটেরারাও এভাবে দেশ ছেড়ে পালাবে।

তিনি বলেন, আজিজ সেনাবাহিনীকে কলঙ্কিত করার মিশনে নেমেছিল। রাষ্ট্রীয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তারা দুজনে মিলে বিতর্কিত করার খলনায়ক। তাদেরকে অনতিবিলম্বে পাকড়াও করতে হবে। প্রবাসী ভাইদের বলবো, যে দেশেই তারা পালিয়ে যাক, আপনারা তাদেরকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না। দেশের জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে তারা শান্তিতে ঘুমাবে, তা হতে দিবেন না। তাদেরকে দেশেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই সরকার বেনজীর-আজিজবান্ধব বাজেট ঘোষণা করেছে। ১৫% কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিয়েছে এই বাজেটে। এই বাজেট ঋণনির্ভর। বিদুৎ, জ্বালানি খাতে ভর্তুকির বদলে উল্টো দাম বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। এই বাজেট মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। আমরা এই আজিজ-বেনজীরবান্ধব বাজের প্রত্যাখ্যান করছি।

কর্মসূচিতে সভাপতিত্বে করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর হিরন, সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন।

গণবিক্ষোভে আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, ফাতিমা তাসনিম, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক নাদিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, যুবনেতা ওবায়দুল হোসেন শুভ, জাহিদুল ইসলাম আপেল, জিহাদ হোসেন মিঠু, রাজিব শাহ, শেখ মো. মুনায়েম, শফিকুল ইসলাম শোভন, ছাত্রনেতা সম্রাট প্রমুখ।