বেনজীর-আজিজরা সরকারের ক্ষমতার সিকিউরিটি গার্ড: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘অবৈধ সরকারের দখলদারিত্বের ক্ষমতার সিকিউরিটি গার্ড হচ্ছে বেনজীর-আজিজরা।’ 

রবিবার (৯ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ ও পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের বিষয়ে ঐতিহাসিক মন্তব্যগুলো কী ছিল বেনজীর আহমেদের? কত ধমক কত হুমকি, তিনি তখন বলেছিলেন অস্ত্র দেওয়া হয়েছে আপনাদেরকে কি হাডুডু খেলার জন্য। প্রধানমন্ত্রী আপনার যদি ন্যূনতম মানবতাবোধ থাকতো দেশে যদি আইনের শাসন থাকতো সেই দিনই তো আপনি বেনজীর আহমেদকে গ্রেপ্তার করতেন। উনি প্রকাশ্যে এই দেশের নাগরিক বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি তখন তাকে গ্রেপ্তার করেননি, কারণ আপনার অবৈধ ক্ষমতার তারা ছিল রক্ষক। আর এই রক্ষক হতে গিয়ে তারা যে কত ভক্ষণ করেছে সেটা এখন দেখা যাচ্ছে।

রিজভী বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছে অনেক স্বাধীনতা যোদ্ধা। আমরা তাদেরকে স্মরণ করি। ব্রিটিশ আমলেও নিয়ম ছিল কোনো উচ্চ পর্যায়ের সরকারি চাকরি পেতে হলে তার ১৪ পুরুষের মধ্যে কেউ ফৌজদারি আইনে দণ্ডিত আছে কি-না সেইটা দেখা হতো। যদি দেখা হতো ফৌজদারি আইনে কেউ চোর, ডাকাত, তাহলে চাকরি পেতো না যতই ভালো রেজাল্ট করুক। পূর্বপুরুষ যদি চোর ডাকাত হয় তাহলে সে চাকরি পাবে না। আর জেনারেল আজিজ তাহলে কী করে চাকরি পেলেন? এটা তো আজকে একটা বড় ধরনের প্রশ্ন জনগণের। আপনি প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন আমার জনগণ লাগবে না, ভোট লাগবে না, নির্বাচন লাগবে না, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথাটা আমি মাটির মধ্যে মিশিয়ে দেব।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরে এই আজিজ সাহেব বলেছিলেন, স্বাধীনতার পরে নাকি এত সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। অর্থাৎ যে নির্বাচন ২০১৮ সালের নিশিরাতে হয়েছিল যে নির্বাচনকে দেশের মানুষ মিডনাইটের নির্বাচন বলে সেই নির্বাচনকে তিনি তকমা দিলেন স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন। শেখ হাসিনা আজিজ-বেনজীরদেরকে প্রটেকশন দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনাকে প্রটেকশন দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, আপনার নিপীড়নের ভয়ে, আপনার গুমের ভয়ে, আপনার বিচারবহির্ভূত হত্যার ভয়ে, আপনার ক্রসফায়ারের ভয়ে গণমাধ্যম কর্মী, রাজনৈতিক দল আপনাদের দুর্বৃত্তপনা আপনাদের লুণ্ঠন জনগণের বিরুদ্ধে আক্রমণ এটার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক তিনি বলেছেন, আমরা অনেক কিছুই জানতাম, কিন্তু লিখে সাহস পাইনি প্রকাশ করতে আমরা ভয় পেয়েছি। কারণ আমাদের পাশে সরকার থাকবে না। সরকার থাকে বেনজীরদের পক্ষে সরকার থাকে আজিজদের পাশে।

রিজভী বলেন, এত বড় একটি ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের ঘর উড়ে গেল মানুষের চাল উড়ে গেল, সুন্দরবনের হরিণ ভেসে গেল দেড় লক্ষ বাড়ি ঘর আপনার ধ্বংস হয়ে গেল কয়জন মন্ত্রী সেখানে গেছে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী এত কথা বলেন কিন্তু প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে একটি প্রতিবাদ করতে পারেন না।

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, এয়ারপোর্টে সমস্ত বিমান বন্ধ করে দিয়ে তিনি দেখা করতে গেলেন তার গুরুর কাছে। শেখ হাসিনা মনে করেন তার গুরুর সাথে দেখা করলেই হয়ে যাবে। আমাদের স্বাধীনতা আমাদের সার্বভৌমত্ব সবকিছু তিনি বিসর্জন দিয়ে দুর্বল করে তিনি তাদের কাছে মাথা নিচু করেছেন। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন বিশ্বের বর্তমান যে পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বাজেট সেইভাবে দিতে হয়েছে উপায় নাই।বিশ্বের পরিস্থিতি কি তাই? আপনার মন্ত্রী আত্মীয়-স্বজন আপনার মন্ত্রী এমপিদের আত্মীয়-স্বজন আপনার ব্যবসায়ী ঘনিষ্ঠজনরা যতো টাকা লুট করেছে এই টাকা তো বাংলাদেশে নেই পাচার করেছে। না হলে ১ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা ঋণখেলাপি হয় কী করে? বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথা বলেন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে কোথাও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তো মুদ্রাস্ফীতি বাড়েনি। যুদ্ধের পরেও ইউরোপে মুদ্রাস্ফীতি হয়নি আমেরিকায় বেকারত্বের সংখ্যা সবচাইতে কম।

সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার প্রমুখ।