ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশাকে মর্যাদা দেবে আশা ফখরুলের

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি। দ্য মিরর এশিয়া

ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশাকে মর্যাদা দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আধুনিক কৃষি, অভিন্ন নদীর পানি আগ্রাসন এবং জলবায়ুর ভারসাম্যহীনতা রোধে শহীদ জিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের নতুন সরকার সম্পর্কে বলার আমার একটাই কথা- ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ; নিঃসন্দেহে আমাদের অনেক প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ। আমরা ভারতের নতুন সরকারের কাছে একটাই আশা করবো তাদের দেশে যেভাবে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, এখনও তাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তাদের বিচার বিভাগ যেভাবে কাজ করতে পারে আমরা ১৯৭১ সালে সেই লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা দেশে গণতন্ত্রকে সেইভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, আমাদের যেটা প্রত্যাশা- ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের জনগণের যে প্রত্যাশা সেই প্রত্যাশাকে তারা মর্যাদা দেবেন সেই ভাবেই তারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গতকালকে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, সেখানে আমার পুরোনো এক ইউনিভার্সিটির বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল; আমি নাম বলবো না তার। আপনারা হয়তো অনেকেই চিনে ফেলবেন। সে এখন রাজনীতি থেকে দূরে আছে। তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, পরবর্তীকালে সে আওয়ামী লীগ করেছে, এমপিও হয়েছে, কিন্তু এখন প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে সে রাজনীতি থেকে দূরে সরে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি রাজনীতি করছো না কেন? সে বলে যে কোন রাজনীতি করবো। আমি বললাম আওয়ামী লীগ করবা। সে বললো আওয়ামী লীগ কি আর আওয়ামী লীগ আছে? এটাতো এখন আজিজ আর বেনজীরের আওয়ামী লীগ। এই যে দেখুন একজন আওয়ামী লীগের নেতার উপলব্ধি। এটাই বাস্তবতা। আজকে আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ নেই।

বাজেট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এদের সম্পূর্ণ বাজেটটাই হচ্ছে তাদের লুটপাটের।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের ক্ষুধার শেষ নেই। সব কিছু খেয়ে ফেলছে। সরকারের লোকজন যার যা খুশি তাই করছে। এই যে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে দেশে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশের ৫৩ বছরের সমস্ত অর্জনগুলো ধ্বংস করে ফেলেছে। কোথাও কোনো বিচার নাই, ব্যবসা করতে গেলে সরকারের লোকজনকে চাঁদা দিতে হবে। এরা পরিকল্পিতভাবে দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এমন উন্নয়ন করেছে সরকার জনগণ এখন ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে।

ফখরুল বলেন, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কারো কথা বলার স্বাধীনতা নেই। দেশে পুরোপুরিভাবে একটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য যেমনভাবেই হোক এই ভয়াবহ দানব সরকারকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাতা করা।

তিনি বলেন, দেশ গভীর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক, অন্যদিকে ভৌগোলিক দিক থেকে। তিস্তার পানি নিয়ে বহু খেলা হচ্ছে। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও এখন পর্যন্ত তিস্তার পানি চুক্তি করতে পারে নাই এই সরকার। অথচ জিয়াউর রহমান তিস্তার পানির জন্য জাতিসংঘ পর্যন্ত গিয়েছিলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়া শুধু ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন না তিনি ছিলেন দার্শনিক। আমরা কারো সংগ্রাম কারো অবদানকে ছোট করতে চাই না। জিয়াউর রহমানকে ছোট করা মানে দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তাকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারি নাই, চক্রান্তকারীরা তাকে হত্যা করেছে।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কৃষক দলের যুগ্ম-সম্পাদক শাহাদত হোসেন বিপ্লব, কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, সাংগঠনিক দিপু হায়দার খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।