বাজেটে আইএমএফ ও অলিগার্কদের জয় হয়েছে: এবি পার্টি

সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানায় এবি পার্টি। ছবি: দ্য মিরর এশিয়া

প্রস্তাবিত বাজেটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ এবং ধনবাদী অলিগার্কদের জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে এবি পার্টি। দলটি বলেছে, হেরে গেছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ। মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্বল বিনিয়োগ ও খেলাপি ঋণের কোনো সুরাহা এই বাজেটে হয়নি; এই বাজেট সরকারের ডামি ও চুরি নীতির ধারাবাহিকতা মাত্র।

আজ (১০ জুন) সোমবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা জানান এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। 

সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছে তাতে দুই-তৃতীয়াংশ সরকারের বেতন ও বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে খরচ হয়ে যাবে। এই বাজেটে খরচের সবচেয়ে বড় খাত হলো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ খাত। এইখাতে বাজেটের ১৪.২ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। ৪ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সরকার এই বাজেটে নতুন করে আরও ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা নতুন ঋণ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। উন্নয়নের যে বাজেট রাখা হয়েছে সেটা পুরাটাই ঋণ নির্ভর।

তারা বলেন, দেখে মনে হচ্ছে সরকার আইএমএফ থেকে তৃতীয় কিস্তি সুরক্ষিত করতে মরিয়া, ডলারের রিজার্ভ এবং পেমেন্টের ভারসাম্যের ওপর চাপ কমাতে সে দিশাহারা। প্রস্তাবিত বাজেট ঋণ ও ঘাটতিভিত্তিক হওয়ায় এর ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চাওয়া ছাড়া তার আর কোনো বিকল্প নেই। এভাবে ঋণনির্ভর ঘাটতি বাজেট চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছর পর দেখা যাবে করের সব টাকা দিয়েও ঋণ শোধ করা যাবে না এবং ঋণ করে ঋণের সুদ শোধ করতে হবে। এই স্বৈরাচারী শাসনের অবিরাম লুট ও লুণ্ঠন এভাবে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেশকে চিরস্থায়ী ঋণের ফাঁদে ফেলে দিচ্ছে। 

বৈধ আয়কর দাতাদের সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ আর অবৈধ কালোটাকার মালিকদের কর ১৫ শতাংশ করার সমলোচনা করে এবি পার্টির নেতারা বলেন, এটা সরকারের কৌশলগত ডামি ও চুরি নীতির ধারাবাহিকতা। নিজস্ব লোককে দিয়ে তারা যেভাবে বিরোধীদল বানিয়েছে তেমনি দলীয় লোকদের দুর্নীতি-লুটপাটের কালোটাকাকে বৈধ করে দেওয়ার এটা একটা নির্লজ্জ পদক্ষেপ।

তারা বলেন, বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭% প্রস্তাব করা হলেও চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে প্রায় ৫.৮%। যদিও সরকারের দেওয়া তথ্য ও ডাটা বিশ্বাস করা কঠিন, কারণ তারা সেখানেও নানা ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। 

রাজস্ব সংগ্রহের পরিকল্পনাকে আকাশ-কুসুম ও অবাস্তব আখ্যা দিয়ে এবি পার্টি বলেছে, এনবিআর কখনোই ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারেনি। শ্রমজীবী ​​ও মধ্যবিত্তদের ওপর করের বোঝা দিন দিন অসহনীয় মাত্রায় বাড়ছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি সংস্থাগুলো মূল্যস্ফীতি ৯% বললেও বাস্তবে মূল্যস্ফীতি ২০-৪০%। এই বাজেট বাস্তবায়িত হলে মূল্যস্ফীতি কমার বদলে আরও বাড়বে, দরিদ্র পরিবার বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত থাকবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রস্তাবিত বাজেটকে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ বাজেট না বলে ‘দুর্নীতি, কালোটাকা ও ঋণখেলাপিবান্ধব দেশ দেউলিয়া করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

এসময় বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি প্রমুখ।