হরিজনদের উচ্ছেদ করা হবে সবচেয়ে বড় ডাকাতি: জিএম কাদের

জিএম কাদের। ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বলেছেন, ‘হরিজনদের উচ্ছেদ করে বিল্ডিং করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করলে তা হবে সবচেয়ে অন্যায় এবং লজ্জার। হরিজনদের উচ্ছেদ করা হবে সবচেয়ে বড় ডাকাতি। এটা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বংশালে হরিজনপল্লি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, ‘হরিজন সম্প্রদায় ব্রিটিশ আমল থেকে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। এখানে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষ বাস করছে। এখানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সিটি করপোরেশনে তারা পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করছে। এটা লাখ টাকার বিনিময়েও অনেকেই করতে পারবে না। এরা সব চেয়ে বেশি নিগৃহীত ও নিপীড়িত এবং অসহায়।’

তিনি বলেন, ‘বংশালের আগা সাদেক লেনের মিরনজিল্লাহ পল্লিতে বাস করা হরিজনদের পাশে দেশ-রাষ্ট্র-সরকারের থাকার কথা। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি দলীয় সরকার, দলীয় লোকদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাজ করছে। তারা উন্নয়নের নামে ব্যক্তি ও দলের উন্নয়ন করছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের উন্নয়ন। এ মানুষগুলোকে রাস্তায় ঠেলে দিলে তারা কোথায় যাবে? এ নিয়ে সরকারের কোনো ভাবনা নেই। এই মানুষগুলোকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে কিসের উন্নয়ন? কিছু মানুষ হয়তো দোকান-পাট করে বা ইজারা নিয়ে লাভবান হবে।’

জিএম কাদের বলেন, ‘দেশ এখন আওয়ামী লীগের দেশ হয়ে গেছে। তারা সাধারণ মানুষকে মানুষ মনে করে না। তাদের সুবিধামতো দেশ পরিচালনা করছে। দেশের মালিক এখন আর জনগণ নেই, তারা সরকার পরিবর্তন করতে পারে না। জনগণের কথায় সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, এ জন্যই আমরা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছি।’

জি এম কাদের বলেন, করপোরেশনের কথা না শুনলে হরিজনদের চাকরিচ্যুত করা হবে। এই মানুষগুলো অত্যন্ত অসহায়। তারা দোকান দিতে পারে না, তাদের হাতে কেউ কিছু খেতে চায় না। অথচ তাদের সার্ভিস ছাড়া আমাদের জীবন অচল। মানবিক দৃষ্টি দিয়ে বিষয়টি দেখা উচিত। যে কোনোভাবে এটা ঠেকাতে আমরা চেষ্টা করব।’

তিনি বলেন, এ সরকার আওয়ামী লীগ দ্বারা গঠিত, আওয়ামী লীগের স্বার্থ দেখার জন্য কাজ করছে। জনগণের দাবি তারা কেয়ার করছে না। উন্নয়নের নামে বিল্ডিং করে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা অন্যায়। আজ হরিজনদের পাশে থাকার লোক নেই, এদের দিয়ে ব্যবসা করা বা ভালো থাকার লোকের অভাব নেই। এটা দেশের জন্য ও সরকারের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এ গরির মানুষদের উচ্ছেদ করে বিল্ডিং করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করলে তা হবে সবচেয়ে অন্যায় এবং লজ্জার। হরিজনদের উচ্ছেদ করা হবে সবচেয়ে বড় ডাকাতি। এটা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, সরকার এখন অনেক শক্তিশালী, তাদের সাথে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। তাদের পেশিশক্তি, অর্থশক্তি ও মাস্তানদের সামনে সাধারণ মানুষ অসহায়। সাধারণ মানুষ সংখ্যায় বেশি হলেও দানবীয় শক্তির কাছে পরাজিত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। হরিজনদের জন্য জায়গা করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব।’

তিনি আরও বলেন, মানুষের অধিকার দিতে হবে, না দিলে মানুষ এটা জোর করে আদায় করবে। এ অন্যায় চিরদিন চলতে পারে না। সংসদে কথা বলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জোর করে এই সরকারকে বাধ্য করার মতো রাজনৈতিক শক্তি আমাদের তৈরি হয়নি। আমরা প্রয়োজনে আইনগতভাবেও সহায়তা দিয়েও সাধারণ মানুষের পাশে থাকবো।

এ সময় বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কৃষ্ণচরণ কুঞ্জমাল, হরিজন নেতা বায়জুলাল, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল দাস, জাতীয় পার্টি নেতা সাধন কুমার মিশ্র, হুমায়ুন কবির কালা এসময় উপস্থিত ছিলেন।