ঈদের আগেই কেন বিএনপিতে কমিটি ভাঙার হিড়িক
হঠাৎ করে ঈদ-উল-আজহার আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ চারটি মহানগরে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অন্য দুটি কমিটি হলো চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি। একই সঙ্গে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এভাবে গভীর রাতে বিশেষ করে কোরবানির ঈদের আগে বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়ায় বিলুপ্ত কমিটির নেতারা বিস্মিত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দলের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা কিংবা নতুন কমিটি ঘোষণা করার বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দীর্ঘদিন সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে যে আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তা পর্যালোচনা করার পর দলের হাইকমান্ড মনে করছে এসব ইউনিট নতুন করে গঠন করা প্রয়োজন।
কমিটি বিলুপ্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘হঠাৎ করে নয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে নির্বাচনের আগে ও পরের আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আরও আগে। এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগেই ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার বিএনপির চারটি মহানগর, যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদ ও ছাত্রদল ঢাকা মহানগরের চারটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিগত আন্দোলনে যারা ব্যর্থ হয়েছেন তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে যোগ্যদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল দলের স্থায়ী কমিটির সভায়। এখন তার বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। কারণ চলতি বছরের শেষের দিকে আবার সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। তার আগে যেখানে যেখানে দূর্বলতা রয়েছে তা দূর করা হবে।’
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। পাশাপাশি যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম শাখার কমিটির বিলুপ্ত করা হয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএনপির চারটি মহানগর ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর ও বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। এসব জায়গায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, ‘দলের কমিটি বিলুপ্ত কিংবা নতুন কমিটি গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। দল যা ভালো মনে করেছে তাই করেছে। ভবিষ্যতে আমাকে যে দায়িত্ব দেবে তা যথাযথভাবে পালন করবো।’
উল্লেখ্য ২০২২ সালের ২৭ মে যুবদলের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। আট সদস্যের কমিটিতে সভাপতি করা হয় সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে, যিনি আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক করা হয় মোনায়েম মুন্নাকে, যিনি বিগত কমিটির সহসভাপতি।
এদিকে যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করার পর আজ শুক্রবার যুবদলের পদবঞ্চিত নেতারা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় তাদের মাঝে খুশীর আমেজ বিরাজ করছিল। পদবঞ্চিত এসব নেতারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় দীর্ঘক্ষণ যুবদল অফিসে বসেছিলেন। পদবঞ্চিত এক নেতা বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। এখন দলের হাইকমান্ড বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করায় আমরা খুশি। তাই বাইরে থেকে বিরিয়ানি এনে সবাই মিলে খেয়েছি।’
এছাড়া পৃথক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির আজ এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১ মার্চ বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে দলটি। রাকিবুল ইসলামকে সভাপতি ও নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া কমিটিতে আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, শ্যামল মালুমকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আমানউল্লাহ আমানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, মো. জাহাঙ্গীর আলমকে দপ্তর সম্পাদক এবং শরিফ প্রধান শুভকে প্রচার সম্পাদক করা হয়।
বিএনপির চারটি মহানগর, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের চারটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করার বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিজ নিজ বিভাগের জেলাগুলোর নেতাদের আন্দোলন সংগ্রামে কার কি ভূমিকা ছিল তা পর্যালোচনা করে রিপোর্ট পেশ করতে বলেছিলেন। তারই ভিত্তিতে এখন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দলের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। সে কার্যক্রমও চলছে।’