সীমান্ত অরক্ষিত, অবিলম্বে সেনা মোতায়েন করতে হবে: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশের সীমান্ত আজ অরক্ষিত। বিশেষ করে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন আজ প্রায় অবরুদ্ধ। বাংলাদেশের নাগরিকরা সেখানে যেতে নিরাপদ বোধ করছে না। সেন্টমার্টিনকে ঘিরে গত কয়েকদিন মিয়ানমার যা করছে, এটি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য চূড়ান্ত হুমকি। তাই অবিলম্বে সেখানে সেনা মোতায়েন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ স্লোগানটি গণতন্ত্রকামী মানুষের মনোযোগ কেড়েছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই স্লোগানটি হতে পারে এমন ‘দেশ আজ নির্লজ্জ তাবেদারের খপ্পরে’। এ কথাটা কেন বললাম? কারণ, হাসিনার অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার কারণে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার হারিয়ে জনগণ আজ নিজ দেশেই যেন পরাধীন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দীর্ঘদিন থেকেই চরম অস্থিরতা চলছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ভারী অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। যুদ্ধকবলিত মিয়ানমারের জান্তা সেনারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায়শই ঢুকে পড়ছে। হাসিনার তাবেদার সরকার যথারীতি জান্তা সেনাদেরকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ, গত ৭-৮ বছরেও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে জোর করে ঠেলে দেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজনকেও মিয়ানমার ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। কেন সম্ভব হয়নি? বাংলাদেশ কি কোনো দেশের স্বার্থ রক্ষা করছে? তাহলে কার স্বার্থ রক্ষা করছে? মিয়ানমারের ব্যাপারে বাংলাদেশ কী নীতি অবলম্বন করছে, অবশ্যই জনগণের সেটি জানার অধিকার রয়েছে। শেখ হাসিনার তাবেদারী আচরণের কারণে বাংলাদেশের নাগরিকগণ যেন আজ কোনো সীমান্তেই নিরাপদ নয়।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশসহ মোট সাতটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। অন্য কোনো দেশের সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা করার সাহস না করলেও বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায়ই বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিকরা। গত ৯ জুন কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এভাবে একের পর হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আর তাবেদারী মানসিকতার কারণে বাংলাদেশ সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করার সাহস এবং স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। হাসিনার তাবেদার সরকারের ঘনিষ্ঠ কুকি চিন পর্যন্ত পার্বত্য এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। আজ বাংলাদেশের সীমান্ত অনিরাপদ। বিপন্ন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব। অথচ স্বৈরাচারী হাসিনার তাবেদার সরকার-নির্বিকার।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, হাসিনা তার তাবেদার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে আজিজ আর বেনজীরের মতো দুর্নীতিবাজদের ব্যবহার করে দেশে বিদেশে বিশেষায়িত বাহিনীগুলোর সম্মান-গৌরব-ইমেজ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। ভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং মত দমনে স্বৈরাচারী হাসিনা যেভাবে র্যাবকে ব্যবহার করেছে, দেশ এবং জনগণের স্বার্থে এই খুনি বাহিনীতে এই মুহূর্তে আর কোনো সেনা কর্মকর্তা এবং সদস্যদের পোস্টিং অবিলম্বে বন্ধ হওয়া জরুরি। হাসিনার অবৈধ ক্ষমতা আর ভোট ডাকাতি নিরাপদ করা সেনাবাহিনীর কাজ নয়, বরং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ রাখাই সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ। সার্বভৌমত্ববিরোধী তৎপরতা চললেও সীমান্তজুড়ে এখনো কেন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে না?
তিনি বলেন, ‘বিনাভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, জনপ্রশাসন এবং বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোভী-দুর্নীতিবাজদের নিয়ে ভোট ডাকাত শেখ হাসিনা একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এই মাফিয়া চক্র প্রতিবার তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হাসিনাকে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা নবায়ন করতে সহযোগিতা করে। অপরদিকে ভোট ডাকাত হাসিনা মাফিয়া চক্রকে অবাধ দুর্নীতি আর লুটপাটের সুযোগ করে দেয়। এটি জনগণের কাছে স্পষ্ট, খুনি-দুর্নীতিবাজ আজিজ-আনার-বেনজীর চক্র শেখ হাসিনার মাফিয়া চক্রেরই প্রোডাক্ট। এরাই শেখ হাসিনার মাফিয়া সরকারের প্রতিচ্ছবি। চিহ্নিত ভোট ডাকাত শেখ হাসিনাই বেনজীরদের সকল অবৈধ ক্ষমতার উৎস। দেশে গুম-খুন অপহরণ ভোট ডাকাতিসহ যাবতীয় অপকর্মের জন্য বেনজীর ছিল খুনি হাসিনার অন্যতম প্রধান বিশ্বস্ত হাতিয়ার। শেখ হাসিনা নিজেই আজিজ-বেনজীরসহ এই মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।’
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদেই আজিজ কিংবা বেনজীরের মতো দুর্নীতিবাজদের বসিয়ে ভোট ডাকাত হাসিনা প্রতিবারই তার বিনাভোটের সরকারের মেয়াদ নবায়ন করে চলেছে। বেনজীরের নজিরবিহীন রিপোর্ট যেভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তদন্ত করলে দেখা যাবে, সাবেক প্রধান বিচারপতি, দুদকের সাবেক প্রধান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা অনেক বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তার পাহাড়সম দুর্নীতির তথ্যও একইভাবে বেরিয়ে আসবে। কারণ, হাসিনা নিজেই দেশের অন্যতম শীর্ষ দুর্নীতিবাজ। বিনাভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে দুর্নীতিই হাসিনার মূলনীতি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরকে বেনজীর-আজিজের মতো অবাধ দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ না দিলে তারা কেউ হাসিনার ভোট ডাকাতিতে সহযোগিতা করবে না, দুর্নীতিবাজ হাসিনা এটি ভালো করেই জানে। হাসিনার শাসনকালে এ পর্যন্ত যতগুলো চাঞ্চল্যকর দুর্নীতি কিংবা ব্যাংক লুটের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় মহাচোরদের সঙ্গে হাসিনার সখ্যতা প্রমাণিত।’
তারেক রহমান বলেন, ‘একটি জাতীয় দৈনিকের একজন প্রবীণ সম্পাদক বলেছেন, তারা বেনজীরের অপকর্ম সম্পর্কে জানতেন কিন্তু কিছু লেখার সাহস করেননি। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, যদি আমরা পরিবর্তন চাই, যদি আমরা আনার-বেনজীর-আজিজদের মতো দুর্নীতিবাজ এবং মাফিয়ামুক্ত শাসন-প্রশাসন দেখতে চাই, যদি আমরা আমাদের তরুণ যুবকদের ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা থেকে বাঁচাতে চাই, যদি আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার চাই তাহলে গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র মানবাধিকার ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুন অপহরণের শিকার হয়েছে। মিথ্যা কিংবা গায়েবি মামলায় সারাদেশের অসংখ্য নেতাকর্মীরা কারাভোগ করেছেন।’