ভারতের রেলে নিঃশেষ হবে দুর্বল সার্বভৌমত্বের বাকি অংশ: রিজভী
বিএনপির সিনিয়ির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের সামরিক এবং বেসামরিক পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে রেললাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড। এতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব দেশের ‘ইন্টিলিজেন্স’ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। দেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নতজানু সরকার যদি এই রেললাইন নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন করে তাতে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বকে ক্রমাগতভাবে মিলিয়ে দেওয়া হবে। দখলদার সরকার জোর করে টিকে থাকার জন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ-ভারত সর্ম্পককে ডামি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রজা-ভৃত্যের সম্পর্কে পরিণত করেছেন। যারা প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে আমাদের লোক হত্যা করছে। তাদেরকে সব উজাড় করে দেওয়ার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, প্রতিদিন যেখানে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের জীবন যাচ্ছে, যারা বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার ও মানবতার তোয়াক্কা করে না তারাই যদি বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে সামরিক ও বেসামরিক পরিবহন উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে ধাবিত করে তাহলে বাংলাদেশের দুর্বল সার্বভৌমত্বের বাকি অংশটাও নিঃশেষ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, যারা বাংলাশের জনগণের বিরুদ্ধে গণহিংসার মনোভাব পোষণ করে তাদের কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের চাবি তুলে দেওয়া হবে এই স্থাপনার মাধ্যমে। বহুত্ববাদী প্রকাশকে অগ্রাহ্য করে ভারত এখন এক শৈলিক রাষ্ট্র। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের চেতনায় এক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে ভারত। সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা সন্নিবেশিত থাকলেও বাস্তবে প্রবল আকারে চর্চিত হয় সাম্প্রদায়িকতা। রাজনৈতিক বহুত্বের কণ্ঠস্বর সেখানে ক্রমান্বয়ে স্তিমিত হচ্ছে। দেশের মানুষ জানে যে, শেখ হাসিনা অনেক গোপন চুক্তি করেছেন, এখন সেই চুক্তিগুলির স্বরূপ প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। আর সেজন্যই বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে দিয়ে শেখ হাসিনা গোপন চুক্তিকেই এখন দিনের আলোতে নিয়ে আসছেন। জনগণের মতামত ছাড়াই শেখ হাসিনা নিজের অহংকে বাস্তবায়িত করতে দেশের ভেতর দিয়ে রেলপথ নির্মাণে অনুমতি দিচ্ছেন শুধুমাত্র নিজের অবৈধ ক্ষমতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। কারণ তিনি ভোটারবিহীন ডামি নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী।
রিজভী বলেন, ব্যাপক বেকারত্ব, চরম মূল্যস্ফীতি, জাতীয় রিজার্ভের ভয়াবহ পতন, কঠিন ডলার সংকট, বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংকগুলো খালি হয়ে যাওয়া, জ্বালানির নিশ্চিয়তা ছাড়া একের পর এক ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ, হাজার-হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির কোমর ভেঙে ফেলা হয়েছে। ব্যক্তিগত আয় ও জীবনযাত্রার মান দিন দিন প্রকট হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের আর্থিক খাত এখন সবচেয়ে বির্পযস্ত ও নিরাপত্তাহীন। নৈতিকতাহীন, অপচয়, অনিয়ম, দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংক খাত এখন খাদের কিনারে। ভয়াবহ আর্থিক খাত থেকে মানুষের চোখ সরানোর জন্য সরকার এখন নানা তামাশা ও চক্রান্তের আশ্রয় নিয়েছে। এবারের ঈদে মানুষ নিরানন্দে দিন কাটিয়েছে। গরুর হাটে কেনাকাটা ছিল কম। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরু খামারিরা গরু বিক্রি করতে না পেরে চরম দেনায় পড়েছে, কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই দখলদার সরকার জোর করে টিকে থাকার জন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি করতে শুরু করেছে।
প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, মানুষের মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতায় আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন অভিমত প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছিল, সেই ধারাগুলোই সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালায় মত প্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণমূলক ধারা সংযোজিত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ চূড়ান্ত রুপ ধারণ করবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা কফিনে ঢুকানোর পর এটাই হবে সর্বশেষ পেরেক।
সংবাদ সম্মলেনে উপস্থতি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বিএনপি নেতা অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল, যুবদল নেতা গিয়াসউদ্দিন মামুন, ছাত্রদলের সহ সভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।