জনগণের অধিকার খর্ব করতে সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে: মান্না

ফাইল ছবি

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, জনগণের অধিকার খর্ব করতে সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সমাবেশে দেশের অবস্থা তুলে ধরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মান্না বলেন, ‘একটা সরকারের আমলে যাকে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছে, এ সরকারই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিয়েছে, যাকে প্রধান সেনাপতি বানানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিয়েছে, যিনি পুলিশ বাহিনীর প্রধান ছিলেন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কাহিনী এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এটা একটা সরকার হলো?’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘জিনিসের দাম কমাতে পারে না, আমার-আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। কিন্তু কোর্টকে দিয়ে কোটা তুলে দিতে পারে… কোর্টকে দিয়ে এমন এমন কাজ করে যাতে জনগণের অধিকার খর্ব হয়।’

পেনশন নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘নতুন পেনসন স্কিম করেছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা মানে না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ। কোনো মন্ত্রী কোনো কথা বলছেন না। আমি পত্রিকায় দেখলাম, আজকে নাকি সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের সঙ্গে বসবেন, কিন্তু পরে শুনলাম তা স্থগিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কোটা বাতিল করার পর গতকালকের মিছিল দেখেন, শিক্ষকদের ধর্মঘট দেখেন, রাজপথ আবার সরগরম হচ্ছে। আবারো বিরোধী দল মাঠে নামছে। আমি আপনাদের বলি, কেউ কেউ বলেন, ভাই আগেও বলেছেন, কিন্তু সরকার তো যায়নি। আমি মানি… যায়নি কিন্তু যাবে, সরকারকে যেতে হবে...এ সরকার থাকার সরকার নয়। এটা কোনো সরকারই নয়।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে অষ্টম সংসদের বিরোধী দলের প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর সংসদ ভবন এলাকায় পুলিশি হামলায় ১৪ বছরেও দোষীদের বিচার না হওয়ার প্রতিবাদে এ সমাবেশ হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে জয়নুল আবদিন ফারুক উপস্থিত ছিলেন, তবে কোনো বক্তব্য দেননি।

২০১১ সালে সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে বিরোধী দলীয় হুইপের নেতৃত্বে বিএনপির সংসদ সদস্যদের মিছিলে পুলিশ হামলা করে। 

সমাবেশে মান্না আরও বলেন, ‘আজকের পত্রিকায় দেখলাম উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলছেন, ট্রানজিট দিয়েছি… তাতে ক্ষতি কী? আরে ট্রানজিট তো দেননি, করিডোর দিয়েছেন। আপনার দেশ দিয়ে ট্রেন ঢুকবে, সেই ট্রেন আবার তাদের দেশেই ঢুকবে। এই ট্রেন মালবাহীও হতে পারে, এই মালগাড়ির মধ্যে কী থাকতে পারে তা আমরা জানি না।’

নাগরিক ঐক্যের এই সভাপতি বলেন, ‘কোনো দেশ যদি মনে করে যে, মালগাড়ির মধ্যে অস্ত্র আছে… আপনাদের চতুর্দিকে সেভেন সিস্টারের মধ্যে গোলামালগুলো চলছে, তারা যদি মনে করে এর মধ্যে অস্ত্র আছে; আমরা বাধা দেব। তার মানে হচ্ছে, বাংলাদেশকে আপনারা একদিকে চীন এবং ভারতের মধ্যে যে করিডোর, তাদের মধ্যে সমস্যা করে তার জায়গা তৈরি করেছেন, আরেকদিকে আপনি ওইসব এলাকায় যত সমস্ত বিদ্রোহী আছেন তাদেরকে উস্কে দিচ্ছেন। দেশের স্বাধীনতার ওপরে এটা একটা বিপদ হতে পারে।’

মান্না বলেন, ‘একইভাবে ট্রানজিটের পাশাপাশি যে রকম করে স্যাটেলাইট চুক্তি করা হয়েছে, আমার দেশের মধ্যকার সমস্ত গোপন তথ্য ভারতের কাছে চলে যাবে। কেন তার সাথে চুক্তি করতে হবে? একই প্রশ্ন করি, আমাদের আনবিক শক্তি বিকাশের জন্য ভারতে সাথে কাজ করতে হবে কেন?’

তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে বলছেন এটা চুক্তি নয়, কিন্তু যখন সমঝোতা স্মারক করা হয় তার মানে বুঝানো হয় যে, এটা চুক্তিতে গড়াবে। আমরা বলছি, এসব বাতিল করেন। পরিণতি খারাপ হবে এক কথায়… সেই পরিণতি বিবেচনা করেই আমরা বলছি, এই সমঝোতা স্মারকের পরে এগুলো চলবে না।’

মান্না বলেন, ‘এক কথায় এই সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে না। এ সরকার জিনিসের দাম কমাতে পারে না, জনগনের ভরনপোষণ দিতে পারে না, ভোট দেয় না, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় না, মানুষের ওপর অত্যাচার করে, নির্যাতন করে, এখন পর্যন্ত  জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামার বিচার করা হয়নি। এর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে।’

সংগঠনের সভাপতি মনজুর রহমান ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।