হঠাৎ ছাত্রদল নেতাদের ধরপাকড়

ছবি: দ্য মিরর এশিয়া

বেশ কিছুদিন ধরে তেমন কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম নেই বিরোধীদের। এরপরও ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের বাসায় অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কাউকে কাউকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ তাদেরকে গ্রেফতারের বিষয়টি যেমন স্বীকার করছে না; তেমনি তাদেরকে প্রকাশ্যেও আনা হচ্ছে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নেওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা থানায় যোগাযোগ করলে থানা-পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করছে। এতে করে তাদের পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান রাসেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মারজুক আহমেদ আল আমিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জহির হাসান মোহন ও সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামানকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রাসেলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এছাড়া আরও কয়েক নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ছাত্রদল নেতাদের গ্রেফতারের কারণ কী হতে পারে তা জানতে চাইলে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘যতদূর জানতে পেরেছি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এসব নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’

পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কোটা বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে যে আন্দোলন হচ্ছে তাতে যাতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত হতে না পারেন সে জন্য এমন করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা তার।

তিনি বলেন, ‘যে কারণেই হোক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই ভালো জানে কেন তারা নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে।’

ছাত্রদলের সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাদেরকে গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান রাসেলকে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনা হয়নি। সে গত পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ।’

যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সারাদেশের অধিকাংশ মানুষ সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রাখার বিরোধিতা করছেন। কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করছে। এ অবস্থায় বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল যাতে কোটা বাতিলের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে না পারে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাত্রদলের নেতাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করে থাকতে পারে বলে আমি মনে করছি।’

এদিকে রাসেলের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সোমবার রাজধানীর আজিমপুর অগ্রণী স্কুলের সামনে থেকে তাকে উঠিয়ে নেয় সাদা পোশাকের লোকজন। এরপর থেকে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে ছাত্রদল ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায় থেকে দৌড়ঝাপ করেও আতিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার রাসেলের বাবা আবুল হোসেন সরদার লালবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। আবুল হোসেন বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটিও করছেন। তিনি বলেন, ‘সন্তানকে খুঁজে পেতে অনেক চেষ্টা করছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হচ্ছে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের এক নেতা বলেন, ‘সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন হিসেবে আমরা এমন প্রেক্ষাপটে বসে থাকতে পারি না। এ আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে এবং থাকবে। আমাদের অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোটা বাতিলের পক্ষে কথা বলেছেন। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের কথা বলেছেন।’

বিএনপির অভিযোগ, গত মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মারজুক আহমেদ আল আমিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। মারজুক তার ভাইয়ের অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। একই দিন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জহির হাসান মোহনকে তুলে নিয়ে যায়। দুই দিন পর গত বৃহস্পতিবার তাদের দুজনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে গত ২৫ জুন নয়াপল্টনে ককটেল হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে গত রোববার সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামানকে তার নিজ বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। পাঁচদিন পর বৃহস্পতিবার তাকে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ছাত্রদলের আরও দুই নেতাকে গ্রেপ্তারে ডিবি তাদের বাসায় অভিযান চালিয়েছে। তারা হলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম (সোহেল) এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জিহাদুল ইসলাম। তবে অভিযানের সময় তাদের কেউ বাসায় ছিলেন না।’