শেখ হাসিনার পতনের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে চূড়ান্তভাবে মাঠে নামুন: তারেক রহমান

দেশবাসীকে শেখ হাসিনার পতনের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রবিবার এক ভিডিও ভাষনে তিনি বলেন রাজপথে নামুন আজ থেকে এখন থেকে। কারফিউ ভেঙে দখল নিন রাজপথের।

তিনি বলেন, গত ১৮ জুলাই থেকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গণহত্যা চলছে। পুলিশ-র্যাব-বিজিবি, ছাত্রলীগ-যুব লীগের সন্ত্রাসীরা গণহত্যা চালাচ্ছে। গনহত্যায় ছাত্রছাত্রীসহ এ পর্যন্ত শত শত মানুষ শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজমান। দেশের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম সত্য প্রকাশ করতে পারছেনা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ববাসী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বর্তমানেও বাংলাদেশের চলমান গণহত্যা বন্ধে নিরস্ত্র জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ব বিবেকের কাছে উদাত্ত আহবান জানাই। ।   

তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র ছাত্র জনতা সর্বশক্তি দিয়ে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি কিংবা ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীবাহিনী লেলিয়ে দিয়েও গণ আন্দোলন দমনে খুনি হাসিনা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। খুনি হাসিনা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে  অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আবু সাঈদের মতো বীর সন্তানেরা পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে শহীদি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে দ্বিধা করছেনা।  তাই যত অপচেষ্টাই চলুক, খুনি হাসিনার পক্ষে অবৈধভাবে আর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রাখা সম্ভব নয়। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত খুনি হাসিনা  তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেছে। মোতায়েন করেছে সেনাবাহিনী।  বাংলাদেশের পক্ষের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহবান, আপনারা তথাকথিত কারফিউ ভেঙে রাজপথের দখল নিন।  

সেনাবাহিনীকে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, খুনি হাসিনা কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনীকে রাজপথে দেশের ছাত্রছাত্রীদের মুখোমুখি করে দিয়েছে। সেনাকর্মকর্তা এবং সেনা সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, খোঁজ নিয়ে দেখুন, এই ছাত্রছাত্রীরা আপনার কিংবা আপনার কোনো একজন সহকর্মীর ভাই, বোন, সন্তান কিংবা স্বজন। তাহলে কাদের মোকাবেলা করতে বন্দুক হাতে রাজপথে নেমেছেন? মনে রাখবেন দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে আজকের এই ছাত্রছাত্রীরাই আপনাদের সহায়তায় জীবনবাজি রাখবে। 

"সেনা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে আরও বলতে চাই, দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ, সেনাবাহিনী আগে 'দেশপ্রেমিক' শব্দটি ব্যবহার করে।  সেনাবাহিনী যদি 'দেশপ্রেমিক' হয় তাহলে নিজ দেশের জনগণের বুকে গুলি চালাতে পারে? তাই সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেয়ার, সেনাবাহিনী কি দেশ এবং জনগনের পক্ষে থাকবেন নাকি তাবেদারী শাসনের অধীনে নিজেদের মর্যাদাকে ভুলুন্ঠিত করবেন। 

তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে আরো একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০০৯ সালে বিডিআর পিলখানায় আপনাদের সাহসী সহকর্মী সেনা কর্মর্তাদেরকে যখন  নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল।  আপনাদের সহকর্মীদের পরিবারের সদস্যদেরকে অপমান অপদস্থ করা হয়েছিল। সেই সময় সহকর্মীদের রক্ষায় আপনারা কি কোন ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন? কেন পারেননি? কখনো নিজের বিবেককে জিজ্ঞাসা করেছেন?  আপানাদেরকে কেন সেই সময় ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আসার অনুমতি পর্যন্ত দেয়া হয়নি? আজ এতো বছর পরও কি  আপনারা আপনাদের সহকর্মী হত্যার সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন? হত্যার বিচার দূরে থাক তাবেদার স্বৈরাচারীর কাছে  সহকর্মী হত্যার বিচার চাওয়ার সাহসও কি আপনাদের আছে? নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন, কেন আপনারা সেই সাহস হারিয়ে ফেলেছেন?          

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের প্রতি আহবান, জনগণের বুকে বন্দুক তাক করবেন না। দেশের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। ছাত্রছাত্রীদেরকে ভয় দেখাবেন না। আজকের এই গণ শত্রুহাসিনার অবৈধ ক্ষমতালিপ্সা মেটাতে এই ইউনিফর্মের অমর্যাদা করবেন না। ব্যারাকে ফিরে যান। অরক্ষিত সীমান্তে সতর্ক নজর রাখুন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, চাকুরীতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রছাত্রিরা আন্দোলন শুরু করেছিল। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন নিয়ে খুনি হাসিনা এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রধান বিচারপতিও উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন। এর প্রতিবাদে মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করেও রাজপথের মরণপণ আন্দোলন প্রমান করে দিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের চলমান আন্দোলন এখন আর স্রেফ কোটা সংস্কারের দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এবং দেশের আপামর জনগণ/রাষ্ট্র সংস্কার চায়। প্রতিটি হত্যার বিচার চায়। শেখ হাসিনা নিজেই খুনি। খুনির কাছে খুনের বিচার সম্ভব নয়। শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হাসিনাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় রেখে রাষ্ট্র সংস্কারও সম্ভব নয়। আন্দোলনকারীদের এখন একটাই দাবি, খুনি হাসিনার পদত্যাগ। দফা এক দাবি এক-খুনি হাসিনার পদত্যাগ।