বিএনপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও তারেক রহমানকে হিরো বানাচ্ছে সরকার: এবি পার্টি 

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি বলেছে, একটি জনপ্রিয় ছাত্র আন্দোলনকে ভুল পন্থায় নিয়ন্ত্রণ ও নির্দয়ভাবে দমন করতে গিয়ে সরকার পুরো দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন জ্ঞানশূন্য হয়ে তার দায় বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর ওপর চাপিয়ে প্রকারান্তরে বিএনপিকেই জনপ্রিয় করা এবং বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে হিরো বানানোর মিশন নিয়েছে সরকার।

আজ বুধবার এবি পার্টি আয়োজিত চলমান পরিস্থিতির ওপর এক প্রতিবাদী ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

রাজধানীর পুরানা পল্টনের এবি মিলনায়তনে বিকেল ৩টায় দলের পক্ষ থেকে ব্রিফিংকালে বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।

অ্যাডভোকেট তাজুল বলেন, ১ সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্যপ্রবাহ বন্ধ রেখে সরকার সকল সংবাদ মাধ্যমে নিজেদের বানানো কাহিনী প্রচারে বাধ্য করছে। এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে। মানুষ এখন এতটাই বিরক্ত যে, সরকারের এসব একতরফা প্রচারণায় দুয়েকটা সত্য তথ্য থাকলেও মানুষ তার কোনটাই বিশ্বাস করছে না। সরকারের পজিটিভ মোটিভেশনকেও জনগণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে বিবেচনা করছে।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে সরকার নতুন প্রজন্মকে জোরপূর্বক যা গলাধ:করণ করাতে চেয়েছিল মাত্র ৩ সপ্তাহের আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম সব কিছু উল্টে দিয়েছে। সরকার ও সরকারী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে গণমানুষের এত বিরক্তি ও ক্ষোভ দেখে কোন বিবেকবান নাগরিক হতবাক না হয়ে পারেনি। জাফর ইকবালের মত দলান্ধ লেখকও হতাশায় মুষড়ে পড়তে বাধ্য হয়েছেন। দেশের শিল্পী, কলাকুশলী, খেলোয়াড়, শিক্ষক সমাজ এমনকি সোশ্যাল মোটিভেটররাও ছাত্রদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকারকে বার্তা দিয়েছেন, কিন্তু সরকার সে বার্তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সরকার ‘ক্ষমতার মোহে অন্ধ’ উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট তাজুল বলেন, জনগণের মতামতকে গুরুত্ব না দিলে ইতিহাসের করুণ পরিণতি বরণ ছাড়া ক্ষমতাসীনদের আর কোন গত্যান্তর থাকবে না।

এসময় মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের শুরুতেই আমরা প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনকে ‘সরকারের একটা সাজানো প্লট’ বলে অভিহিত করেছিলাম। কারণ রেল ট্রানজিটের নামে ভারতকে একতরফা করিডোর দেওয়া ও সরকারের বড় বড় কর্তাব্যক্তিদের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে আমরা তখন রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলছিলাম। আমাদের আন্দেলনের দিক থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগেই সমাধান হয়ে যাওয়া কোটা প্রসঙ্গটিকে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সামনে আনা হয়েছে বলে আমরা সদ্ধিগ্ন ছিলাম। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এই আন্দোলনকে দায়সারাগোছে নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল। বিএনপি কেন এরকম একটা জনপ্রিয় আন্দোলনকে সক্রিয় সমর্থন দেয়নি সেজন্য তাদের প্রচুর সমলোচনা হয়েছিল। মূলত, এই আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও অন্তর্ভুক্তি তৈরি হয় চীন থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর উস্কানিমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সশস্ত্র ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর লেলিয়ে দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

রংপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা আবু সাঈদকে পুলিশ প্রকাশ্যে গুলি করে মারার পর এবং সারাদেশ পুলিশ-বিজিবির বেপরোয়া গুলি ও গণহারে ছাত্রহত্যার পর পরিস্থিতি আর কারও নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। সরকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ায় এবং মোবাইল ইন্টারনেটসহ সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় নেমে আসে চরম বিপর্যয়। কত মানুষ মারা গেছে, কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেসব বিষয়ে জনগণ এখনো অন্ধকারে আছে।

মঞ্জু বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সরকারের এরকম ব্যর্থতা ও হটকারিতার পর যেভাবে তারা এখন বিএনপি-জামায়াত ও তারেক রহমানকে সবকিছুর জন্য দায়ী করে প্রচারণা চালাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে প্রকারান্তরে বিএনপিকে আরও জনপ্রিয় করা এবং বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে হিরো বানানোর মিশন হাতে নিয়েছে তারা।

আওয়ামী লীগের ভুল রাজনীতির কারণে এদেশে গৃহযুদ্ধ আসন্ন বলে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার, গণগ্রেফতার বন্ধ, সবার জন্য ইন্টারনেট সেবা চালু ও আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবিসমূহ মেনে না নিলে সরকার গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং এর পুরো দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।

ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান মিলু, রিপন মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।