আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে: মির্জা ফখরুল

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে 'গণহত্যা' আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশ শাসন করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নিহত, পঙ্গু ও আহত হওয়া নিরীহ মানুষের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার ও সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় লাশের ওপর দিয়ে হেঁটে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে গত কয়েকদিনে নিরীহ ছাত্র ও জনতাকে পাখির মতো গুলি করে চালানো গণহত্যার ঘটনা পাকিস্তানি আগ্রাসনের স্মৃতি জাগায়।’

ফখরুল বলেন, জনগণের টাকায় কেনা গোলাবারুদ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর কী পরিমাণ ব্যবহার করা হয়েছে তা দেশবাসীকে জানাতে হবে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'রাষ্ট্রীয় টাকায় কেনা হেলিকপ্টার ব্যবহার করে' এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারকে একদিন জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'যে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।’

নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ভয়ানক ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করতে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে সব দেশপ্রেমিক, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের প্রতি বিএনপি আহ্বান জানাচ্ছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব রাষ্ট্রীয় শক্তি ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের উচ্ছেদ করে বিএনপির নেতা-কর্মী ও ছাত্রদের গ্রেপ্তার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফখরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অন্তত তিন হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘এটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনক।’

তিনি দাবি করেন, বিরোধী দলের নেতাদের তুলে নিয়ে গিয়ে দমন করার চার-পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে, যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার গুমের ভয়ংকর সংস্কৃতি অব্যাহত রেখে মানুষের মনে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ‘আমি এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ হামলায় হতাহতের যে নৃশংস নজির সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশে-বিদেশের সব স্বৈরশাসকের নির্মম নিষ্ঠুরতাকে ছাড়িয়ে গেছে।

ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা ঢাকতে নির্বিচারে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করছে।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আজকেও (শুক্রবার) আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ অনেক সিনিয়র নেতার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। সাধারণ মানুষের গ্রেপ্তার, কারাবাস, নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে।’

বিরোধী দলের গ্রেপ্তার হওয়া সব নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা 'মিথ্যা' মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।