জুলাই গণহত্যা, ২০২৪ : রক্তাক্ত বাংলাদেশ
বিএনপি অভিযোগ করেছে সারাদেশকে এক বধ্যভূমিতে পরিনত করেছে সরকার। শিক্ষার্থী বিক্ষোভ দমনে সরকারের দমন, নিপীড়ন নিয়ে প্রচারপত্রে এ অভিযোগ করা হয়েছে।
পাঠকদের জন্য বিএনপির প্রচারপত্রটি এখানে দেওয়া হলো।
প্রিয় দেশবাসী,
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিক ও ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনটি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও অরাজনৈতিক আন্দোলন। অবৈধ স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য, সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশে, তার অবৈধ মন্ত্রীদের আরো বেআইনি কর্মকাণ্ড ও ইন্ধনে, তার পেটোয়া বাহিনী, পুলিশ লীগ, র্যাব, বিজিপি সহ সকল আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও সর্বশেষে সেনাবাহিনী কর্তৃক সরাসরি নিরীহ নিরস্ত্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ ও জনগণের উপর বর্বর নারকীয় সশস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে সারা দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে।
লাশের প্রকৃত হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। দেশের জাতীয় দৈনিক গুলোর তথ্য মতে ২০২ জনের লাশের হিসাব কয়েকটি বড় হাসপাতালের সূত্রে পাওয়া গিয়েছে। এর বাইরে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে ২১ জনের দাফন সম্পন্ন করেছে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম। গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছেন ৫৫ জন, আরো ৩ শতাধিক প্রায় অন্ধত্বের পথে। অনেক হাসপাতাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশ জোর করে মৃত্যু তালিকা নিয়ে গেছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়- লাশের সংখ্যা ৯৮৭ জন। কত লাশ গায়েব করা হয়েছে, হেলিকপ্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার হিসেব নেই। আবাসিক এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ নিয়ে যাওয়ার ভিডিও প্রচারিত হয়েছে বিদেশী টেলিভিশনে। এছাড়া গুরুতর আহতের সংখ্যা দশ সহস্রাধিক হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম মন্তব্য করেছে।
খুনি হাসিনা নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর হত্যাযজ্ঞ চালাতে জাতিসংঘ শান্তি মিশন প্রদত্ত যানবাহন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছে। কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনী সহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেশের জনগণের উপর বিজাতীয় শত্রুর মত লেলিয়ে দিয়ে আজ পুরো জাতিকে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই ভারতীয় সেবা দাস খুনি হাসিনা। খুনি হাসিনা সরকার এই বর্বর হত্যাকান্ডকে রাজনৈতিক রূপ দিতে বিএনপি ও জামায়াতসহ সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দায়ী করে গনহারে গ্রেফতার করছে ।
আমরা গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সাথে প্রত্যক্ষ করছি যে, একদিকে শত সহস্র শহীদের রক্তগঙ্গা বহমান, অন্যদিকে ভারতীয় সেবা দাস খুনি হাসিনা মংলা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দায়িত্ব ভারতের হাতে তুলে দেয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতীয় রেল যাবে দর্শনা থেকে চিলাহাটি হয়ে ভারতের ‘হলদিবাড়ি’তে, যার মাধ্যমে আমাদের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভারত-চীনের মাঝখানে যুদ্ধ ক্ষেত্র বানানোর পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করা হলো। বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্য বানানোর সকল প্রক্রিয়া ভারতীয় সেবাদাস, পুতুল সরকার প্রধান খুনি হাসিনা সম্পন্ন করে ফেলেছে।
কোমলমতি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের “রাজাকারের নাতি পুতি” আখ্যায়িত করে জাতিকে অপমানিত এবং বিভক্ত করার দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে খুনী হাসিনাকে ,এটা ছাত্র সমাজের দাবি। ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায় স্বীকার করে খুনী হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, এটা সমগ্র জাতির দাবি।
খুনিদের কাছে খুনের তদন্ত ও গণহত্যার বিচার চাওয়ার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। ছাত্র সমাজের ন্যায্য দাবী ও অধিকারহারা জনগণের সকল অধিকার কেবল জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেই পাওয়া যাবে। চলমান ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলন এখন গোটা ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ এর গণ আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়ে আমাদের শপথ নিতে হবে।
তাই, লাখো শহীদের রক্তে কেনা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আসুন, সবাই মিলে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করি। বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলি- “দফা এক, দাবি এক, খুনী হাসিনার পদত্যাগ”।
‘গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধে’ জনগণের বিজয় অনিবার্য ইনশাআল্লাহ।