নির্মম হত্যাযজ্ঞে আওয়ামী লীগের মধ্যেও ক্ষোভ: অনেক নেতাই মনে করছেন অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে দলটি

কোটা সংস্কার আন্দোলন নৃশংসভাবে দমনের কারণে দেশে-বিদেশে সাধারন মানুষ ও প্রবাসীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর বাইরে নেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। দলটির অনেক নেতা ক্ষুদ্ধ হয়েছেন নির্বিচারে গুলি হত্যাকাণ্ডে।

প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও দলের এই অংশটি ভিতরে ভিতরে চরম ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দল চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ন্যাক্কারজনকভাবে ব্যবহার করেছে এবং শত শত সাধারণ মানুষ ও ছাত্র হত্যা করেছে তা নজিরবিহীন। এর দায় একদিন আওয়ামী লীগকে নিতে হবে এবং বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হতে পারে। 

তারা বলেন, চলমান ছাত্র আন্দোলন আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে পারতাম। খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেভাবে ছাত্রলীগকে উস্কে দিয়েছেন তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের মুখোমুখি দাড় করিয়েছেন ছাত্রলীগকে। যার কারণ বিক্ষুব্ধ সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মেরে পিটিয়ে অপমানিত করে বের করে দিয়েছে। এই ঘটনা ছাত্রলীগের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

শুধু তাই নয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ চলমান কোটা আন্দোলনে সাধারণ মানুষের যে অংশগ্রহণ ছিলো তার বিপরীতে দাড়াতে পারেনি। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দায়িত্বশীল নেতারা টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন করার কারণে আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিট দুর্বল হয়েছে। যার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানগর উত্তরের ২৭টি কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকার এমপিরা রাজপথে থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে মোকাবেলা করতে পারেননি। দলটির নিয়ন্ত্রন এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। আমলা ও বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন দলটিকে পরিচালনা করছে। 

নেতারা বলেন,  দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ শত কোটি, কেউ আবার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এসব নেতাদের কেউ কেউ বিদেশে সেকেন্ড হোম বানিয়েছেন। অনেকেরই ভিন দেশের ভিসা নেওয়া। দেখা যাবে আগামী দিনে ছাত্র জনতা যে গণআন্দোলন গড়ে তুলবে তা আওয়ামী লীগ মোকাবেলা করতে পারবে না। যেমনটা পারেনি কোটা আন্দোলনে। অভিযোগ রয়েছে আন্দোলনের সময় কেউ কেউ দেশ ছেড়েছিলেন। সামনে আবার দেশ ছাড়বেন পরিস্থিতি খারাপ হলে। 

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বিগত দিনে বিএনপি জামায়াতের আন্দোলন যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মোকাবেলা করা হয়েছিলো এবার একইভাবে সরকার ছাত্রদের আন্দোলন মোকাবেলা করতে চেয়েছিলো বল প্রয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু সরকার ভুলে গেছে বিএনপির আন্দোলন আর ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলন এক নয়। বিএনপির আন্দোলন নৃশংসভাবে দমন করতে পারলেও সরকার ছাত্র ছাত্রী দের আন্দোলন নৃশংসভাবে দমন করতে পারবে না। বিষয়টি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। এতো দমন পীড়নের পরও তাদেরকে দমানো যাচ্ছে না। আগামীতে দমানো যাবে তারও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং আন্দোলন আরও বাড়বে। অঘোষিত জরুরি অবস্থা বহাল রেখে কাজ হবে না।

না প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এসব নেতারা বলছেন, ছাত্র হত্যার তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে থেকেও সরকারের উপর চাপ আসতে পারে। এখন সরকার এই চাপ কিভাবে মোকাবেল করবে তা দেখার বিষয়। তবে কোনো কারণে যদি গণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতাচ্যুত হই তবে অস্তিত্বের সংকটে পড়বে দলটি।  

৭৫ এর পরও তো ঘুরিয়ে দাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ, এবার পতন হলে কেন ঘুরে দাড়াতে পারবে না। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১৯৭৫ এর কিছু সেনা সদস্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। কিন্তু এবার যদি গণঅভ্যূত্থান হয় তবে তাতে জনসাধারণের অংশ থাকবে। গত কয়েকদিনের রাজপথের পরিস্থিতি তাই বলে।