‘সরকারের ভাগ্য চিকন সুতায় ঝুলছে’

কোটা আন্দোলনকে ধবংস করতেই সরকার বিরোধী দলের ওপরে সহিংসতার দোষ চাপাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

বুধবার দুপুরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঞ্চের সমন্বয়ক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ সারাদেশ আজকে এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শতশত শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে… সরকার এতো লাশের মিছিল, এতো লাশ তারা তৈরি করেছে তাকে ঢাকতে পারছে না। তাকে ঢাকার জন্য আজকে আমরা দেখছি, তারা নানান রকম রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করছে।”

‘‘ একদিকে সরকার বলছে, এক কাজ জামায়াত-শিবির করেছে তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যদিকে আমরা দেখি তারা(সরকার) যে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করছে তার ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নাই। এই রাজনৈতিক পরিচয়হীন শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করছে। সরকারের প্রতারণা আজকে পরিস্কার। তারা সমস্ত আন্দোলনকে ধবংস করতে চায়, সমস্ত আন্দোলনকে ধবংস করার জন্য আজকে সহিংসতার দায় চাপিয়ে যেভাবে অতীতে করেছে সেইভাবেই তারা আজকে আন্দোলন ধবংস করতে চায়।”

গণতন্ত্র মঞ্চ পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টায় পুরানা পল্টনে মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কর্মসূচি ছিলো। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে সেখানে ব্যাপক পুলিশ, প্রিজন ভ্যানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়। এরকম অবস্থায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা তাৎক্ষনিক বিজয় নগরে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে ফুটপাতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘ আজকে আমাদের শিক্ষার্খীদের হত্যার প্রতিবাদে এই হত্যা বিচার দাবি করে আমরা একটা সমাবেশ অনুষ্ঠানের করার কথা বলেছিলাম। আজকে পুলিশ কোনোর রকম ন্যুনতম আইন-কানুনের ধার না ধেরে তারা যেভাবে পুরানা পল্টনে এলাকা কর্ডন করে রেখেছে, আগ্রাসী ভূমিকার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাবেশ পন্ড করার চেষ্টা করছে, আমাদের মাইক কেড়ে নিয়েছে, আমরা পুলিশের এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই, প্রতিবাদ জানাই।”

‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ সকল বিরোধী দলগুলো আমরা নির্বাচনের আগের থেকেই এই সরকারের পদত্যাগ চেয়েছি। বাংলার ঘরে ঘরে এই সরকারের পদত্যাগের ধবনি উঠেছে...এই লড়াইটা চালাতে হবে।”

জোনায়েদ সাকি জানান, বৃহস্পতিবার গণতন্ত্র মঞ্চ সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

‘সরকারের ভাগ্য চিকন সুতায় ঝুলছে’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘এখন সরকার শুধুমাত্র টিকে আছে প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। সরকারের ভাগ্য এখন চিকন সুতার ওপরে ঝুলছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমাদের পেশাদার বাহিনী তারা যদি কেবলমাত্র পেশাদারি দায়িত্ব পালন করে এই সরকারের পালিয়ে যাবার আর কোনো পথ পাবে না।”

‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, সংকটটা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করেন। রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হলে কিভাবে আপনারা পদত্যাগ করেন, পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে আলাপ-আলোচনার করে অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে সম্ভব স্বল্পতম সময়ে গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের পথ আপনারা তৈরি করতে পারে। সরকার যদি সেই পথে না হাটের তাহলে যে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে, মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তাদেরকে টেনে নামাতে বাধ্য করবে।”

জনগনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ মানুষের গণঐক্য তৈরি করেন, সকল বিরোধী দলের কার্য্কর ঐক্য তৈরি করেন।”

‘‘ সমগ্র শ্রেনী পেশার মানুষ ভয়কে জয় করে রাজপথে নামতে শুরু করেছে। এই সংগ্রামে এবার বাংলাদেশের মানুষ বিজয় হবে, ছাত্র-শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় হবে, দেশকে রক্ষা করব, দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতকে আমরা রক্ষা করব।”

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘এই সরকার একটা শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনকে নিজেদের জেদ, নিজের অসহিষ্ণুতা, নিজেদের ভেতরকার যে স্বৈরাচারী চরিত্র সেই সমস্ত কিছুর একটা উর্দাগ্র আক্রোশ তারা করতে গিয়ে আজকে সমস্ত আন্দোলনকে একদিকে অপমানিত করেছে, তারপরে তাকে ভয়ংকর রকমভাবে দমন করার চেষ্টা করেছে যা একাত্তর সালের পরে এদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সমস্ত রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের শিশু সন্তানদেরকে বাড়িতে গুলি করে এভাবে হত্যা করার কোনো নজির আমরা দেখিনি।”

‘‘ আজকে শত শত শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই, এসব হত্যার বিচার চাই, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে হবে।”

সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ সহিংসতা হয়েছে অনেকগুলো স্থাপনায়… এটা কারা করেছে? আমরা স্বাধীন নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই। কিন্তু তার আগেই কারা এই সমস্ত কাজ করেছে তার দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন… সমস্ত দোষ তারা আন্দোলকারীদের ওপর দিয়েছে, বিরোধী দলের ওপর দিয়েছে।”

‘‘ এরমধ্য দিয়ে আমরা দেখলাম যে, তারা নির্বিচার গ্রেফতার-হয়রানি, হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন এসব করছেন। আন্দোলনকারী নেতৃত্বকে তুলে নিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে, তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার নামে তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে।”

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। 

সমাবেশে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকবর খান উপস্থিত ছিলেন।