প্রিয় বাংলাদেশ এখন এক মৃত্যু উপত্যকা: তারেক রহমান 

প্রিয় বাংলাদেশ এখন এক মৃত্যু উপত্যকা। জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যায় এক হাজারের বেশি ছাত্র ছাত্রীকে শহীদ করা হয়েছে। দেশের ছাত্রছাত্রী তরুণ যুবকদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতালে কিংবা বাসায় বাসায় মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। রাজধানীর এমন একটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা দেশের এমন একটি জেলা উপজেলাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেখানে কেউ হতাহত হয়নি। ঘরে ঘরে চলছে সন্তান-স্বজন হারা পিতামাতা-আত্মীয়দের আর্তনাদ। এমন নিষ্ঠুর পরিস্থিতিতেও দেশে কারফিউ জারি করে চলছে গণগ্রেফতার। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, হাসিনা একদিকে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী-বিজিবি-পুলিশের খুনি চক্রকে আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে অপরদিকে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে কথিত শোক দিবস পালনের নাটক করেছে। হাজারো মানুষকে খুন করে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষকে আহত করে লাখো কোটি পরিবারের শান্তি বিনষ্ট করেও খুনি হাসিনার কোনো অনুতাপ নেই অথচ রেলের ভাঙা কাঁচ দেখে গণহত্যাকারীর চোখে কুমিরের কান্না। 

অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টায় খুনি হাসিনা জুলাইয়ের গণহত্যায় পুলিশ-বিজিবির পাশাপাশি এবার সেনাবাহিনীকেও ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। গণহত্যাকারী খুনি শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে সেনাবাহিনী এখন নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে 'গোলাগুলি' আর শত্রুর সঙ্গে 'গলাগলি' করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 
 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া ওই ভাষণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সেনা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে, আমি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং সদস্যবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, খুনি হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৯ সালে বিডিআর পিলখানায় সেনা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তখন নিজের সহকর্মীদের রক্ষা করতে আপনার চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অথচ, এখন সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের বুকে গুলি চালিয়ে নিজেদের বীরত্ব জাহির করছেন। বীরত্ব দেখাতে চাইলে, অরক্ষিত সীমান্তে যান। জনগণ মনে করে, তাবেদারী করতে করতে আপনারা স্বাধীনতা, সম্মান, সাহস ও আত্মমর্যাদা হারিয়ে ফেলেছেন। সেনাবাহিনীকে বলবো, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মতো নিজ দেশের জনগণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন না। এতে কোনো বাহাদুরি নেই।  অবিলম্বে ব্যারাকে ফিরে যান।      

দেশেে মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, একজন বাংলাদেশী হিসেবে,  বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী কৃষক, শ্রমিক, স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী, পেশাজীবী তথা ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রতি আমি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলতে চাই, আসুন,সবাই মিলে গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার খুনি-সন্ত্রাসীবাহিনীর বিরুদ্ধে রাজপথে চূড়ান্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলি। যার যা কিছুই আছে, তাই নিয়ে  ছাত্র জনতার বৃহত্তর এই ঐক্যের আন্দোলনকে সফল করি। খুনি হাসিনাকে বিদায় করি। বাংলাদেশকে স্বাধীন করি।    

তারেক রহমান বলেন, তারুণ্যের শক্তি জেগে উঠেছে। গণহত্যা-গণ গ্রেফতার চালিয়ে তারুণ্যের শক্তিকে আর রুখে দেয়া যাবেনা। নির্দ্ধিধায়- নিঃসংকোচে বুকে বুলেট আলিঙ্গন করে শহীদ আবু সাঈদ প্রমান করে দিয়েছে দিল্লির ক্রীতদাসী তাবেদার খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেয়া সেনাবাহিনী-বিজিবি আর পুলিশের খুনি চক্রের ভয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের তারুণ্য আর পিছু হটতে রাজি নয়। ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ককে গ্রেফতার করে খুনি হাসিনা চলমান আন্দোলন দমন করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু এখন সারাদেশে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা, শহর, নগর, বন্দর কোথাও কোনো এলাকায় সমন্বয়কের অভাব নেই। একজন গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন ছাত্র কিংবা ছাত্রী সমন্বয়কের দায়িত্ব গ্রহণ করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। খুনি হাসিনা পতনের এ আন্দোলন এভাবে এখন সারাদেশে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ঐক্যের এ আন্দোলন আর থামবেনা।

ভাষণের শেষে তারুণ্যের এই চলমান আন্দোলন সম্পর্কে কবি রকিব লিখনের কবিতা থেকে পাঠ করে তারেক রহমান বলেন, .
“যদি তুমি ভয় পাও 
তবে তুমি শেষ
যদি তুমি রুখে দাঁড়াও 
তবে তুমিই বাংলাদেশ"