আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি গণ অধিকার পরিষদের

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি গণ অধিকার পরিষদের

আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ উল্লেখ করে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা। 

সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় শেষে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূরু এ দাবি জানান।

নূরুল হক নূরু বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক ভালো ইতিহাস ঐতিহ্য আছে, কিন্তু গত ১৫ বছরে তাদের যে ইতিহাস, পৃথিবীর খুবই জঘন্যতম ইতিহাস। যে শাসক জনগণের উপরে গণহত্যা চালিয়ে, বিদেশি আর্মি ইন্টারম্যাশন করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তার মত দেশদ্রোহী প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে কোনো ভাবেই রাজনীতি করতে পারে না।  

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে, বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে সমগ্র দেশবাসী আন্দোলন- প্রতিবাদ করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক করার জন্য, পুলিশি ব্যবস্থা ফাংশন করা খুবই জরুরি। দেশে যে পরিস্থিতি হয়েছে, অনেক জায়গায়  পুলিশ মনোবল হারিয়েছে। অনেকেই কাজে যোগদান করেনি। 

ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, দেশে কেউ ভায়োলেন্স করতে চাইলে, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে তাদেরকে  আটক করতে সবাই সহযোগিতা করবেন। দেশকে শান্তির পথে পরিচালিত করা আমাদের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব, এই সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেকের অভিজ্ঞতা নেই। কাজেই আমরা যদি সহযোগিতা না করি। আমাদের সহযোগিতা ছাড়া তারা সফল হবে না। আমি মনে বিশেষ করে সাংবাদিক সমাজকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে রোল প্লে করা সময় এসেছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখলে গণমাধ্যমে তুলে আনেন। 

আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা গত চার-পাঁচ বছর ধরে বলছিলাম, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবে, ওবায়দুল-সালমান এফ রহমানরা প্লেটের চাকা ধরে হয়তো পালাতে পারে, আপনাদের এই দেশে থাকতে হবে। কাজেই আপনারা এমন কিছু কইরেন না, পরিবর্তন হলে জনরোষের আপনাদের অবস্থা খারাপ হয়। আপনারা কথা শুনেন নাই।  এমন কর্মকাণ্ড করেছেন জনগণ পাইলে আপনাদের কি করবে আল্লাহ মাবুদ জানে। 

তিনি আরো বলেন, আপনাদের প্রধান পালিয়ে গেছেন। আপনাদের কথা ভাবেননি। তার ছেলে বলছেন তার মা পার্টির কথা ভাবছেন না। আপনাদের কথা ভাবছেন না। আপনারা যদি কারো উস্কানিতে রাস্তায় নেমে কোনো নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা  করেন, শেখ হাসিনা পালাতে পেরেছেন, আপনার কিন্তু পালাতে পারবেন না। একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অপরদিকে সেনাবাহিনীর, আরেক দিকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা, কাজেই কোনো ধরণের নৈরাজ্য দেখানো দু:সাহস দেখাবেন না। আমরা চাই ক্ষমা চেয়ে আপনারা ভালো হয়ে যান। শান্তিপূর্ণভাবে দেশে থাকেন। কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা করলে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা এবং সরকার ব্যবস্থা নেবে। 

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব একজন জাতীয় নেতা ছিলেন। তার প্রতি কারো ভালোবাসা থাকতে পারে। এখন দেশের যে পরিস্থিতি এই অবস্থায় যদি ধানমন্ডিতে শোডাউন দেওয়া প্রস্তুতি নেন, গোপালগঞ্জে আস্ফাল দেখানোর চেষ্টা করেন, প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন না৷ দয়া করে নৈরাজ্য করার দু:সাহস দেখাবেন না।

এরআগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ৮টি প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবগুলো হলো- 

১। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা ও গুলি চালিয়ে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে জাত সময়ের মারে গ্রেফতার
২। আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা।
৩। সকল জেলায় নতুন পুলিশ সুপার ও উপজেলা/থানায় নতুন ওসি নিয়োগ।
৪। স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, বিভাগীয় ডিআইজিসহ দলবাজ কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের সাথে জড়িতদের দ্রুত 
৫। সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা। চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি ও নির্বিঘ্নে-নিরাপত্তার সাথে কাজ করাসহ দ্রুত সময়ে ৬। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রতি থানায় ১০ জন করে সেনা সদস্য নিয়োগ। পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনসহ পুলিশের সর্বস্তরের ঘুষ-দুর্নীতি মুক্ত করে জনবান্ধন পুলিশি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৭। পুলিশের কোন সদস্যদের বিরুদ্ধে যে কোন অসদাচরণ, দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ১ মাসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৮। বৈধ অস্ত্র জমা নেয়াসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা। বিভিন্ন সময় অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেওয়া।