‘জামায়াতকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল হতে পারে’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাতিল হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির পক্ষে আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আজ সোমবার এ কথা জানিয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আপিল মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
তিনি জানান, নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল হলে দ্রুত আইনি এই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ন্যায় বিচার করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই আইনজীবী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনার সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তখন বিএনপিসহ দেশের গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এ সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে এর প্রতিবাদ জানায়।
এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরবর্তীতে হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। এছাড়াও তৎকালীন শাসনামলে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় দাঁড়িপাল্লা বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতীক উল্লেখ করে এটি কোনো নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না বলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রতীক ছিল দাঁড়িপাল্লা। দলটির এ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিভিন্ন সংসদ নির্বাচন ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে দলীয় প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে ভূমিকা রাখেন।
জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির আজ বলেন, ‘গত ১ আগস্ট সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারার ক্ষমতা বলে জামায়াত, শিবির ও এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নিষিদ্ধ দল ও সংগঠন হিসাবে আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়। ওই দিনই সেনাপ্রধানের অফিস ও বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রেও জামায়াত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জামায়াত রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিযায় ক্রমাগত অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, মন্দির পাহারা, শহিদ পরিবার ও আহত-পঙ্গুদের পাশে দাড়ানো ও বন্যাদুর্গতের মানবিক সহায়তা প্রদান তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য।’
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘১২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সাথে জামায়াতের আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী এই বিষয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হয় এবং আশু সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইনি বিধানগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ১৯ ধারা অনুযায়ী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়। আইন অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক তিন সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল গঠন করা হয়। আমাদের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত যথাযথ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে নতুন গেজেট প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ।
শিশির মনির জানান, এই গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর আপিল বিভাগে জামায়াতের রেজিস্ট্রেশনের মামলা পুনরায় শুনানির আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা আশা করি নতুন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় থেকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।