যৌক্তিক সময় যেন সীমাহীন না হয়: মঈন খান
রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, সরকার যে সংস্কার করতে চায়, তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ধৈর্য ধারণ করে যৌক্তিক সময় দেওয়া উচিত। তবে সরকারকেও ভাবতে হবে সে সময় যেন সীমাহীন না হয়। তা না হলে ছাত্র-জনতার আবারও মাঠে নামতে হতে পারে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি’ আয়োজিত ‘জনগণের প্রত্যাশা, অন্তর্বতীকালীন সরকারের রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার ও সংস্কার আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর করণী বিষয়ে সাধারণ জনগণের মতামত নেওয়া হয়। সভা সঞ্চালনা করেন দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট রোকসানা খন্দকার।
মঈন খান বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশের মানুষের মধ্যে নতুন চেতনা জেগেছে। ফলে বিভিন্ন সংস্কারের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের সংস্কার করা দরকার। তিনি বলেন, একবার-দুইবার নয়। শেখ হাসিনার মতো একজন দুইবার থাকলেই দেশের ১২টা বেজে যাবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন বলেন, বর্তমানে রাজনীতিবিদদের ওপর ছাত্র-জনতার আস্থা নেই। আস্থা ফেরাতে রাজনীতিবিদদেরই কাজ করতে হবে। আত্ম-সমালোচনার পাশাপাশি নিজেদের আচরণে সংস্কার আনতে হবে।
মঈন খান বলেন, ভিন্নমত না থাকলে গণতন্ত্র আসে না। গত ১৬ বছর আমরা এই ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারিনি বলেই, দেশে দুর্যোগ নেমে এসেছিল। পরিশেষে স্বৈরাচার সরকারের পালায়নের মাধ্যমে আমরা ফের মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি, এটা কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, যারাই দেশ শাসন করেন, ভিন্নমতের গুরুত্ব স্বীকার করে নিলে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো সমস্যা হয় না। তবে আজকে যে পরিস্থিতিতে রয়েছি, সেখানে সরকারের আইনের বাধ্যকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। কারণ, এ সরকার ব্যর্থ হলেই দেশে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।
দেশের রাজনৈতিক পরীক্ষায় রাজনীতিবিদদের উত্তীর্ণ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে মঈন খান বলেন, আমি নিজেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি।
তার ভাষ্য-দেশের সাংবিধানিক সংস্কারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার এই মূহুর্তে সবচেয়ে জরুরি। দেশের কোটি কোটি বঞ্চিত মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার যদি ভুল করে তাহলে সবাই মিলে বসে ভুলটা ধরিয়ে দিয়ে পরামর্শ দেওয়া উচিত। এমন কিছু করা যাবে না, যেন যে চেতনায় অভ্যুত্থান হয়েছে তা বাধাগ্রস্ত হয়।
মান্না বলেন, রাষ্ট্রের কাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতার সংস্কার এই মূহুর্তে সবচেয়ে জরুরি। একইসঙ্গে সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে তারা সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে পারবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ৭২ সাল থেকেই এ দেশে দুঃশাসনের একটি চক্র চলছে। একটি দল ক্ষমতা থেকে হটে গেলে আরেকটি দল ক্ষমতায় আসবে, এমন ধারণা কোনো দল করলে তাহলে দেশ আবারও সেই চক্রেই পড়বে। যেই ব্যবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনার সরকার ছিল, সেই ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। তার মতে, প্রতিবিপ্লবের শঙ্কা এখনো আছে। তাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্যপূরণে সরকারকে জাতীয় ঐক্য তৈরির আহ্বান জানান সাকি।
প্রশাসনে নৈরাজ্য চলছে উল্লেখ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এগুলো আর কোনোভাবে দেখতে চাই না। তার মতে, সরকার মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে।
সাইফুল হক বলেন, সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ক্লিয়ার করুন, সময় নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সরকার যদি কোনো রাজনৈতিক অংশীদারত্বের অংশ হতে চান, তবে বিতর্কিত হবেন। তাদের অধীনে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো মিলে যে ৩১ দফা দিয়েছি, সেটা বাস্তবায়ন করতে সরকার আমাদের সহায়তা করবে বলে বিশ্বাস করি।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ তাড়াহুড়োর কোনো নির্বাচন চান না বলে জানান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বচ্ছ নির্বাচন করতে হবে। তবে তারা কী কী সংস্কার করতে চায় তা যদি খোলাখুলি করতো তাহলে সবার মাঝেই দ্বিাধাদ্বন্দ্ব কেটে যেতো। সবচেয়ে আগে জরুরি একটা সুন্দর নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। এরপর সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের ভোটের রায় নিয়ে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা জনগণের কল্যাণে দেশের বাকি সংস্কারগুলো করবে।
গণফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, ছয়টি কমিশন তো হয়েছে, সরকারকে একটু সময় দেন। নির্বাচন কমিশন চলে গেছে, কমিশন এখনো গঠন হয়নি, দুদক পুনর্গঠন হয়নি। এসব বাস্তবায়নে পক্ষে আওয়াজ তুলতে হবে, কেবল সরকারকে প্রেসার দিলে চলবে না। তিনি বলেন, অধৈর্য হলে আমরা ফের বিপদে পড়ব, ফেইল করব। এমন হলে দেশের জনগণ আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত স্বাধীন একটি দেশের জন্য বিএনপি ও দেশের মানুষের তিলে তিলে গড়া আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলেছেন ছাত্র জনতা। আমরা ১৭ বছর ধরে রাজপথে রক্ত দিয়েছি, দলের অনেক নেতাকর্মীরা গুম খুন হয়েছেন।