জুলাই গণহত্যার বিচার না হলে সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা ম্লান হবে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আইনের শাসন কায়েম করে জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকারী ও অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান না করলে মানুষের কাছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা ম্লান হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘ইউনূস গুডউইল বলে একটা কথা আছে। ইউনূস গুডউইলের আমরা প্রতিফলন দেখতে চাই। সেই প্রতিফলন শুধু আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে নয়, দেশের মধ্যে সুশাসন, আইনের শাসন এবং ভয়ংকর জুলাইয়ে যে নারকীয় গণহত্যা হয়েছে সেই অপরাধীদেরকে গ্রেফতার এবং বিচারের নিশ্চয়তা না দিলে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘আমরা বিএনপি পরিবারে’র উদ্যোগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের মোহাম্মদপুরের বাসায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এসব কথা বলেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, যুবদল নেতা মেহেবুব মাসুম শান্ত, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুর রহমান তুষার উপস্থিত ছিলেন।
স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা অবৈধ লুটের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পুতুলের মতো নিষ্পাপ শিশু, বাচ্চাদের রক্ত ঝরাতেও দ্বিধা করেননি উল্লেখ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সবার সমর্থন রয়েছে। কিন্তু কাজের গতি যদি স্লো হয়, কাজের গতি যদি অত্যন্ত নিম্নগতির হয়, তাহলে এদেশের মানুষের কাছে আপনারা দিনকে দিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বেন। আপনারা একটি বিপ্লবী সরকার। এই কিশোর বাচ্চাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে পৃথিবী কাঁপানো যে বিপ্লব হলো ৫ আগস্ট, আপনারা তার সরকার। ওই সমস্ত অপরাধীরা যদি ঘুরে বেড়ায় তারা পিকনিক করে লাঠি মিছিল করে আর আপনারা যদি নিশ্চুপ থাকেন তাহলে তো আপনাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।’
শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকত নিজের জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে আমাদের মুক্ত বাতাসে নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার মতো শহীদদের জীবনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি কারাগার থেকে বেরিয়ে বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে। কিন্তু সৈকতের মতো এমন টগবগে একটি কিশোর ছেলে স্বৈরাচারের গুলিতে মারা যাওয়ায় আজ গোটা দেশ, গোটা জাতি শোকে স্তব্ধ। তার স্বপ্ন ছিল, বুকে অদম্য প্রত্যয় ছিল। একজন ভালো ছাত্র, একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলো সে। এই দেশকে তার আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল। অথচ এর আগেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। তার বিদায় স্বাভাবিক ছিল না।
রিজভী এসময় প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘শেখ হাসিনা, তোমার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কী এত রক্ত, এত লাশের দরকার ছিল! এই বাচ্চাদের লাশ দেখে তুমি খুশি হয়েছিলে! আজ তোমার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। তুমি তোমার মেয়ের সঙ্গে দিল্লিতে একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খাচ্ছো। কতটা নির্লজ্জ তুমি!’
তিনি আরও বলেন, যারা দেশটিকে নিজেদের কব্জায় নিতে চেয়েছিল, শেখ হাসিনা ছিলেন তাদের প্রতিনিধি। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে তিনি নিজ দেশের তরুণদের রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করেননি।
রিজভী বলেন, সৈকতের মৃত্যুর ঘটনায় হতভাগ্যের পিতা একটি মামলা করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনও প্রধান আসামিসহ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। প্রশাসন নানা ধানাই-পানাই করছে। আর গ্রেফতার করবেই বা কী করে। পুলিশের অধিকাংশ কর্মকর্তা ভয়ংকর এক দুরাচারী সরকারের দোসর ছিলেন। স্বৈরাচারের রক্তপিপাসু শাসনকে তারা প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। তা না হলে সৈকতকে গুলি করে হত্যাকারী এসআই শাহরিয়ার গ্রেফতার হতো। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সালমান এফ রহমানদের মতো দুরাচাররা পার পেয়ে যেতো না।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসররা ১৫ বছর ধরে দেশটিকে খেয়ে ফেলেছে। আর তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শেখ হাসিনা তার প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের মাধ্যমে হরিলুটের রাজ্য কায়েম করেছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তারা উপহাস করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ব্যাংকে রাখা অর্থ লোপাট করায় সিদ্ধহস্ত ছিল। আর সেই অর্থ দিয়ে বিদেশে বাড়ি করবে। পাচার করবে। তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠলেই কণ্ঠরোধ করা হত। তারা সেটাই করতে চেয়েছিল। তারা মনে করেছিলো গণতান্ত্রিক শক্তি আর আওয়াজ করবে কোথা থেকে। জনগণ যে ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠেছিলো তারা সেটি টের পায়নি।