সরকার পতনে সবার ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা ছিল: ঢাবি শিবির সেক্রোটারি

সরকার পতন আন্দোলনে ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা ছিল। এখানে সবাই যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছে। ছাত্র শিবিরও তার জনশক্তি নিয়ে সাধ্য অনুযায়ী ভূমিকা পালন করেছে। এটি সব ধরনের মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছিল। তাই এর কৃতিত্ব কোনো একক সংগঠনকে দেওয়া কিংবা আলাদা করে উল্লেখ করা ঠিক হবে না। তাতে আন্দোলনের মূল চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল এসএম ফরহাদ।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সম্প্রতি ঢাবি শিবিরের সভাপতি ও পরে সংগঠনের সেক্রেটারি হিসেবে তার নিজের পরিচয় প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরপর তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ঢাবি শিবির সেক্রেটারি বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নামে রগ কাটার যে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। বরং আপনার গুগলে সার্চ করলে দেখবেন রগ কাটার সব অপরাধ ছাত্রলীগের নামে। মূলত শিবির সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সরকার একটি নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতেই দীর্ঘদিন ধরে এমন অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।

ছাত্রলীগের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার প্রশ্নে  এস এম ফরহাদ বলেন, আপনারা সামাজিক মাধ্যমে আরো ছবি দেখবেন। মূলত ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার বিভিন্ন স্তরে প্রোগ্রাম হয়। সেখানে উপস্থিত থাকতে হয়। তারপর তারা সিভি আহ্বান করে। এর কোনো প্রক্রিয়ার সঙ্গেই আমার ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা আপনারা দেখাতে পারবেন না।

ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক এক মন্ত্রীর সঙ্গে নিজের ছবি থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যে হলে থাকতাম সেই হলের ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি এবং বিভাগের সেক্রেটারি। সেই সুবাদে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজক আমি। সেখানে আয়োজক কিংবা অংশগ্রহণকারী হিসেবে আমার তাদের সঙ্গে ছবি রয়েছে। এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এস এম ফরহাদ বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় কিছু প্রধান বাধা মনে করে। তারা প্রথমেই সেনবাহিনীকে ধ্বংস করে। এরপর তারা শক্তিশালী বাধা মনে করে ছাত্রশিবিরকে। এমনও হয়েছে যে কেউ নামাজ পড়ছে, এমন অবস্থায় তুলে নিয়েও বলেছে ‘অস্ত্রসহ আটক’।

আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্র শিবির সম্পর্কে জনগণের মধ্যে একটি ভীতি তৈরি করেছিল এমন মন্তব্য করে শিবির নেতা বলেন, তারা চেয়েছিল আমাদের দমিয়ে রাখতে। কিন্তু আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের (তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম) আত্মপ্রকাশের পর তা সেই বাধা একেবারেই ভেঙে গেছে। কারণ আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই ছিলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদে ১৯৯০ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি না করতে দেওয়ার বিষয়ে সব ছাত্রসংগঠনের মধ্যে মতৈক্য হয়েছিল। এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কেন-না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো বিষয়ে হ্যাঁ বা না বলার অধিকার কেবল সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের রয়েছে। সেখানে পরিবেশ পরিষদ কারও বিষয়ে একমত হলে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার বিষয়ে এস এম ফরহাদ আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মনে রাজনীতি নিয়ে এখন যে চিন্তা আছে, এটা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী বয়ানেরই ফলাফল। তারা দেখেছে, ছাত্ররাজনীতি মানে নেতাকে প্রটোকল দেওয়া, হলে আসন বণ্টন করা, ভিন্নমতকে নির্যাতন করা এবং কারও কথা বলতে না পারা। কিন্তু আমূল সংস্কারের পর এসব পরিবেশ পরিবর্তন হলে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতিকে গ্রহণ করবেন।