জামায়াত-বিএনপির পাল্টাপাল্টি বিবৃতি

কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বিরাজ করেছে।

জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। যার প্রতিবাদে বিবৃতি দেয় জামায়াত। বিএনপিও বসে থাকেনি। ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতির পাল্টা জবাব দিয়েছে দলটি।

গতকাল রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে তীব্র মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী।

জামায়াতের উদ্দেশে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমলে যারা দখল করেছে সেই এস আলমদের উত্তরসূরী হয়ে ব্যাংক দখল করেছে অনেকে। বড় বড় কথা বলে বিএনপির নামে কলঙ্ক লেপন করছে। পাড়া-মহল্লায় টার্মিনাল দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা কিছু দখলে করেছে একটি দল।

রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ। কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চেনে জনগণ। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী জামায়াত।

বিএনপির এ সিনিয়র নেতা আরও বলেন, শুধু পার্শ্ববর্তী দেশই অপপ্রচার করছে না, দেশের দুই-একটি রাজনৈতিক দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।  তিনি বলেন, একাত্তরের বিরোধিতাকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে।

রিজভী বলেন, ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানেতো বারবার মোনাফেকি করা না। জনগণের প্রতি অঙ্গীকার থেকে বিএনপি কখনও পিছিয়ে আসেনি। ১৯৭১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কখনও মাথা নত করেনি।

রিজভীর অভিযোগ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত।

‘খুব ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান। আপনাদের একাত্তরের অর্জন কী? আপনারা একাত্তরের বিরোধিতা করেছেন। ৭১ ও ৯০-এর গৌরব বিএনপির। সেদিনও শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করে এরশাদের কুলাঙ্গারের নির্বাচনে যাননি? ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানেতো মোনাফেকি করা না,’ বলেন রিজভী।

এরপর রাজনৈতিক মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। রবিবার রাতেই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ, কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চিনে জনগণ, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী জামায়াত।’

‘এ জাতীয় বক্তব্য বিগত কয়েক দশক ধরে প্রচার করা হচ্ছে। রগ কাটা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার, ৭১ এর বিরোধিতা এ সব বক্তব্য জনগণ বহু পূর্বেই প্রত্যাখ্যান করেছে।’

‘রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা উচ্চারণ করে কী অর্জন করতে চান, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। জামায়াত রগকাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি কখনো করেনি। তিনি জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে ‘ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না’ তার এই বক্তব্য চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।’- বলেন রফিকুল ইসলাম খান।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জামায়াত ‘ইসলাম’ নিয়ে রাজনীতি করে না। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে জামায়াত। জামায়াতে ইসলামী কখনো মোনাফেকি করেনি। জামায়াত দেশের মানুষের অধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীনভাবে লড়াই করেছে। জামায়াত কখনো মোনাফেকির আশ্রয় নেয়নি।  রিজভী অবশ্যই অবগত আছেন ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্ন মতের লোকদের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য করা হয়েছিল তা কী জাতির সঙ্গে মোনাফেকি নয়? জনগণ এই রাজনৈতিক ছন্দ পতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ আছে, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। জামায়াতের এই ভূমিকা গোটা জাতি গ্রহণ করেছে। আর এ কারণেই সম্ভবত রিজভীর গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অপবাদ আরোপের রাজনীতি থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এরপরই জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতির পাল্টা জবাব দেয় বিএনপি। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জামায়াত আমিরের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সংক্রান্ত একটি ছবি যুক্ত করে বলা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত দর কষাকষি করে ২২ আসন বাগিয়ে নেয় জোট থেকে। সেই নির্বাচনে ডা. শফিকুর রহমান (জামায়াত আমির) নিজেও ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাহলে কার সঙ্গে জোট? আর কার সঙ্গে মোনাফেকির কথা বললেন আমির?