সবসময় কেন নির্বাচনের কথা বলেন, জানালেন ফখরুল
প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ফের দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি, কেন তিনিসহ বিএনপি নেতারা সব সময় নির্বাচনের কথা বলেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই রাজনীতিক।
মির্জা ফখরুলের মতে, বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের আত্মবিশ্বাস কম। তাই নির্বাচিত সরকার দরকার। কারণ, তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বসবে, তাদের আত্মবিশ্বাস থাকবে। ফলে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান সহজ হবে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়া স্মৃতি পাঠাগার আয়োজিত ‘গ্রন্থ আড্ডা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাকে অনেকে ভুল বোঝে যে, আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন! বিশেষ করে ছাত্ররা তো বলেই।’
‘নির্বাচন তাড়াতাড়ি করার কথা এ জন্যই বলি যে নির্বাচন হয়ে গেলে সমস্যাগুলো চলে যাবে। একটা নির্বাচিত সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বসবে, তাদের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাসটা থাকবে। এখন ওদের (অন্তর্বর্তী সরকার) মধ্যে তো সেই কনফিডেন্সটা নাই। জনগণের ভাষাটা তো বুঝতে হবে!’
দ্রুত নির্বাচন চাইলেও এখনই তা চান—বিষয়টি এমন নয় বলেও জানান তিনি, ‘এখনই করে ফেলতে হবে তা বলছি না। ন্যূনতম যে সংস্কারটা প্রয়োজন, সেটা করে নির্বাচন করলে সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি না, আমার বিশ্বাস ভুল কি না—যেকোনো নির্বাচিত সরকার কিন্তু একটা অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো। আমি যেতে পারি, কথা বলতে পারি—এখন সেই অবস্থাটা নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ একটা ভালো কিছু করার সম্ভাবনা, সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংস্কারের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। আমার বিশ্বাস, প্রধান উপদেষ্টা শিগগির সমাধানের দিকে আসবেন, আলোচনা হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাব।’
‘এখনই নির্বাচন চাচ্ছি না, ন্যূনতম সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই। আমরা সব সময় নির্বাচনের কথা বলি, কারণ অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।’
বিরাজমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা সব পাল্টে দেব, এই মুহূর্তে সব দখল করব—এটা হয় না। আমাদের ধাপে ধাপে যেতে হবে। আমাদের এখানে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, এই অস্থিরতাকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, আমাদের ধৈর্য ধরে পা ফেলতে হবে।’
‘এমন কিছু আমরা করব না যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়, কোনো বিপদ আমরা যেন না ডেকে আনি—এই বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে বলে আমি মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা কথাই শুধু বলতে চাই, কখনও ধৈর্য হারাবেন না, আশা হারাবেন না। আমাদের প্রত্যাশা অনেক, কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম। এই তো মাত্র কয়েক মাস হয়েছে। এর মধ্যেই অনেকে পাগল হয়ে গেছে।’
‘এ সরকার অনেক ভুলত্রুটি করছে। ভুল তো করবেই। তারা তো আর সরকারে ছিল না। তারা তো রাজনীতি করেনি, রাজনীতি বোঝেও না। তাদের তো সেই সময়টুকু দিতে হবে!’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে তো কেউ একটা কথা বলারও সুযোগ পায়নি, সাহসও কেউ পায়নি। আর এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটাতে লাভটা কার? এটাতে এই দেশের, এই সমাজের, এই মানুষের কোনো লাভ হবে না।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগাররের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. জহির দিপ্তীর সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, পলিসি গবেষক মাহাদী আমিন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষানুরাগী আফরোজা খানম রীতা, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন প্রমুখ।