বিএনপির বিরুদ্ধে এক-এগারোর অভিযোগ, ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি মির্জা আব্বাসের
বিএনপি আরেকটি ১/১১ ধাঁচের সরকারের ভিত্তি তৈরির অভিযোগের মাধ্যমে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলটির সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাস।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
আব্বাস বলেন, ‘কোনো কোনো মহল তাদের নির্বিচারে বক্তব্য দিয়ে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, 'আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপিকে ভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন— তাদের পরিণতি ভালো হবে না।’
বিএনপি ১/১১-এর মতো আরেকটি সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করায় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘১/১১ নয়, আপনারা যদি ৫ আগস্টের পরও বিভাজন ও সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে— এমন বক্তব্য দিতে থাকেন, তাহলে দেশে কখনো গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। আমি বলতে চাই, বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করুন’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এ ধরনের সরকার যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে নির্বাচনের সময় সত্যিকারের নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন দেখা দেবে।
পরে রাতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য মূলত ২০০৭ সালে আরেকটি ১/১১-এর মতো সরকার গঠনের ইঙ্গিত দেয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস বলেন, অনেকে এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং বিভিন্ন উপায়ে বিএনপি সম্পর্কে নানা মন্তব্য করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো কোনো নেতা হয়তো তাদের ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে কিছু কথা বলেছেন। সম্প্রতি আমি অনেককে নানাভাবে কথা বলতে দেখেছি। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি ১/১১-এর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। আমি তাদের বলতে চাই, ২০০৭ সালে ১/১১-এর ভয়াবহ পরিণতিতে বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ১/১১-এর ষড়যন্ত্র থেকে বিএনপির সাধারণ সদস্য থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত কোনো নেতাকর্মী রেহাই পাননি।
কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, একটি দল ক্ষমতার লোভে পাগল হয়ে গেছে বলে ডিম ফোটার আগেই মুরগির বাচ্চা গণনা শুরু করেছে।
আব্বাস বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হঠাৎ করে এমনভাবে কথা বলতে শুরু করেছে, যা তাকে শিশুদের আজেবাজে কথা বলার কথা মনে করিয়ে দেয়।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কিছু লোক ও দল এমন আচরণ করছে যেন আওয়ামী লীগের একটি দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের শিবিরের দিকে বিএনপিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, যারা বিএনপিকে আওয়ামী লীগের দিকে ঠেলে দিতে চায়— আয়নায় নিজেদের দেখা উচিত তাদের। নিজেদেরকে নিয়ে ভাবা উচিত এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা কীভাবে রাজপথে সংগ্রাম করেছে, অকাল মৃত্যু, হত্যা, গুম, কারাবাসসহ নানা ধরনের নির্যাতন সহ্য করেছে সে কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আব্বাস বলেন, ‘তারা (মহলটি) এখন আমাদের অন্য শিবিরে ঠেলে দিতে চায়। উদ্দেশ্য কী? আপনি কি আমাদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত করতে চান? এসব নিয়ে কখনো ভাববেন না। কারণ, আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী।’
তিনি বলেন, অনেকে দাবি করেন, বিএনপি শুধু নির্বাচনের দিকেই নজর দিচ্ছে। ‘তবে আমরা শুধু নির্বাচনের দিকে নজর দিচ্ছি না। বিদেশ থেকে আসা কিছু ব্লগার দেশ চালানোর চেষ্টা করে। তারা এমনভাবে কথা বলছেন— যেন তারা যা বলছে, তা বাংলাদেশে বাস্তবে পরিণত হবে। দয়া করে আপনাদের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন ‘
বিএনপিকে দোষারোপ না করে দেশ গড়তে তাদের প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি কাজে লাগাতে ব্লগারদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেতা।
মির্জা আব্বাস বলেন, অনেকেই দাবি করছেন— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন দল গঠন করায়, বিএনপি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘যারা এসব কথা বলেন, তারা জাতির শত্রু। নতুন দল গঠন হবে কি হবে না, তা নির্ভর করছে যারা দল গঠনের চেষ্টা করছেন তাদের ওপর। নতুন দল গঠিত হলে বিএনপির ভূমিকা দেখতে পাবেন। নতুন দল গঠিত হলে আমরা তাকে স্বাগত জানাই।’
বিএনপি নেতা বলেন, যারা দল গঠন করবেন তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করবেন। তবে তাদের ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানান তিনি।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ উপলক্ষে সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বনানীতে আরাফাত রহমান কোকোর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দলের নেতাকর্মীরা।